সপ্তাহের সেরা

    আখ্যাত রচনা

    অনুবাদতাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব চার

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব চার

    মূল : The Six Voyages of John Baptista Tavernier (1678)

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    কনস্টান্টিনোপল থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত সড়কের ধারাবাহিকতা, পারস্য সীমান্ত থেকে এরিভান পর্যন্ত।

    এরিভান থেকে তিন লীগ দূরে এটি প্রথম স্থান, খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এখান থেকেই আরমেনিয়া থেকে পারস্যে যেতে হয়। স্থানীয়রা বলে তিন গির্জা। যেখানে তিনটি গির্জা, তিনটি আশ্রম একটি অন্যটি হতে দূরবর্তী।

    সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে সুন্দর হল আরমেনীয়দের ধর্মপিতার[1] বাসভবন। এর দক্ষিণে আরেকটি আছে, প্রায় এক মাস্কেট-শট[2] দূরত্বে। এটি হতে পূর্বদিকে পোয়া লীগ দূরে আরেকটি ভবন রয়েছে যা কুমারীদের জন্য একটি নানারি[3]। আরমেনীয়রা এটিকে এগমিয়াসিন বা একমাত্র কন্যা বলে ডাকে, যা তাদের প্রধান গির্জার নাম। তাদের উপাখ্যানে দেখবেন, এটি খ্রিষ্টের প্রায় তিনশ বছর পরে নির্মাণ করা শুরু হয়েছিল। দেওয়ালগুলো সুউচ্চ করে তৈরি করা। তারা সারাদিনে যে উঁচু দেওয়াল তৈরি করত রাতে শয়তান এসে তা ধ্বংস করে দিত। এইভাবে বহু বছর যাবৎ নির্মাণ ও ধ্বংসের কাজ চলতে থাকে। কিন্তু একদিন রাতে খ্রিষ্ট স্বয়ং আবির্ভূত হলেন, সেই রাত থেকে শয়তান আর তাদের কাজের ক্ষতিসাধন করতে পারেনি, ফলে তারা উঁচু দেওয়াযুক্ত গির্জাটি নির্মাণে সফল হল। এটি সেন্ট গ্রেগরির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে, যাকে আরমেনীয়রা গভীর শ্রদ্ধা করে। এখানে একটি পাথরের আসন আছে। তাদের উপাখ্যান অনুযায়ী, খ্রিষ্ট এটার উপর বিশ্রাম করেন যখন তিনি সেন্ট গ্রেগরির সম্মুখে আবির্ভূত হন। তারা যখন গির্জায় যায়, তখন গভীর শ্রদ্ধার সহিত এই পাথরে চুম্বন করে।

    দ্বিতীয় ভবনটি একজন রাজকুমারীর সম্মানে নির্মিত হয়েছিল যিনি চল্লিশজন যথার্থ কুমারী নিয়ে সেন্ট গ্রেগরির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই মহিয়সী নারীকে একজন আরমেনীয় রাজা বিষাক্ত সাপে পূর্ণ একটি কূপে নিক্ষেপ করেছিলেন, কিন্তু তার কোন ক্ষতি হয়নি। তিনি সেখানে অলৌকিকভাবে চৌদ্দ বছর জীবিত ছিলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে জন্মানো সাপগুলো কারো কোন ক্ষতি সাধন করে না। সেই মূর্তিপূজক রাজা সেই রাজকুমারীকে উপভোগ করার জন্য ষড়যন্ত্র করেন, কেননা, রাজকুমারী ও তার সঙ্গিনীরা সকলেই ছিলেন অতুলনীয় সুন্দরী। কিন্তু তারা তাদের সদগুণ দ্বারা তাকে পরাস্ত করেন। যখন রাজা দেখলেন যে তার ইচ্ছা পূর্ণ হবার নয়, তখন তিনি তাদের সকলকে হত্যা করেন।

    সমস্ত আরমেনীয়দের প্রথা হল, যারা পারস্য থেকে আসে বা যারা পারস্য ভ্রমণে যায়, এই তিনটি গির্জায় তাদের উপাসনা করতে হবে। এবং কাফেলাকে পাঁচ ছয় দিনের জন্য এখানে অবস্থান করতে হবে। সেই সময়ে তারা তাদের পাপ স্বীকার করে এবং তাদের মহান ধর্মপিতার কাছ থেকে পাপস্খলন লাভ করে।

    ধর্মপিতার অধীনে রয়েছে ৪৭ জন আর্চবিশপ এবং প্রত্যেক আর্চবিশপের অধীনে রয়েছে চার বা পাঁচজন করে সাফরাগান (বিশপ), যাদের সাথে তিনি একটি কনভেন্টে থাকেন। সেখানে তাদের এখতিয়ারে বেশ কিছু সন্ন্যাসী থাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা তাদের প্রার্থনা করে, যা সাধারণত দৈনিক এক ঘণ্টা করা হয়। এরপর তারা সকলে কাজে যায় এবং মাটি খনন করে ও জীবিকার অনুসন্ধান করে। প্যাট্রিয়ার্ক বা ধর্মপিতার রাজস্ব ৬ লাখ ক্রাউন বা তার আশেপাশে। সমস্ত আরমেনীয় খ্রিষ্টান যাদের বয়স পনের বছরের উপরে তারা প্রত্যেকে তাকে বার্ষিক পাঁচ সাউ করে রাজস্ব দিতে হয়। তবে অনেকেই আছেন যারা দারিদ্রতার কারণে তাকে রাজস্ব প্রদান করে না। তাদের রাজস্ব ধনীরা পরিশোধ করতে হয়, কখনো কখনো জনপ্রতি দুই বা তিন ক্রাউন হিসেবে। কিন্তু এই অর্থ ধর্মপিতার পকেটে থাকে না, বরং তিনি নিজেই কখনো কখনো হাত পাততে হয়। কেননা, তিনি দরিদ্র আর্মেনীয় যারা তাদের করজ পরিশোধ করতে পারে না তাদের ত্রাণ প্রদানে নিযুক্ত আছেন। করজ হচ্ছে বার্ষিক রাজস্ব যা তাদের ও তাদের অধীনস্থদের জন্য মুসলমান রাজকুমারদের পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় তাদের মুসলমান হতে হয়। অথবা তারা, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের বিক্রি করতে বাধ্য হয়, যা প্রতিরোধ করার জন্য মহান ধর্মপিতা যথাসাধ্য পরিশ্রম করেন। প্রত্যেক আর্চবিশপ তাদের ডায়োসেস থেকে অভিপ্রায় বাস্তবায়নে যা প্রয়োজনীয় তা তার নিকট পাঠান। সুতরাং প্যাট্রিয়ার্ক একহাতে গ্রহণ করেন ও আর হাতে অন্যদের মাঝে দান করে দেন। চার লাখ গ্রাম থেকে তিনি যে রাজস্ব লাভ করেন, তাতে তার মোটেই লাভ হয় না। সেন্ট স্টিফেনের আর্চবিশপ আমাকে তার এখতিয়ারে থাকা বিষয়ে আমাকে নিশ্চিত করেছেন।

    ১৬৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পারস্য থেকে ফিরে আসার সময় ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আমি তিনটি গির্জায় যাই। প্রচুর তুষারপাতের ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাফেলা সেখানে এগার দিন অবস্থান করেছিল। যে কারণে আর্মেনীয়রা তাদের মেলা সেখানে রাখা স্থির করে এবং তাদের প্রার্থনা করার সংকল্প করে। পরদিন আমি প্যাট্রিয়ার্কের সাথে দেখা করতে গেলাম, তিনি একটি মাদুরের উপর পদ্মাসনে বসে ছিলেন। সেখানে চারজন আর্চবিশপ ও নয়জন বিশপ ছিলেন, তারাও তার মত বসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ইতালীয় ভাষায় খুব ভাল কথা বলতে পারেন। আমি তার সাথে তিন ঘণ্টা থাকলাম; আমরা যখন পরস্পর কথোপকথন করছিলাম তখন কনভেন্টের একজন সন্ন্যাসী উপস্থিত হলেন। তিনি তার উপর আরোপিত তপস্যার কারণে দীর্ঘ বাইশ বছর কারও সাথে কথা বলেননি। মানুষকে এত কৃশকায় ও পঙ্গু হতে দেখিনি। প্যাট্রিয়ার্ক তাকে ডেকে পাঠালেন এবং তার ক্ষমতাবলে তাকে নীরবতা ভঙ্গের নির্দেশ প্রদান করলেন। তিনি আদেশ পালন করলেন এবং তৎক্ষণাৎ কথা বললেন।

    শ্রোভ-সানডে অর্থাৎ পাপ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় যে রবিবারে, তার আগের দিন শনিবারে প্যাট্টিয়ার্ক সমস্ত কাফেলা, তাদের মালিক, তাদের দাসকে পরের দিনের সমবেত প্রার্থনায় অংশগ্রহণ ও কনভেন্টে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। গণপ্রার্থনা সমাপ্তির পর, জনগণকে একটি দীর্ঘ বারান্দায় আনা হল। এটি প্রায় পনের বিশ ফুট চওড়া, উভয় পাশে পাথরের তৈরি টেবিল ও দেওয়ালের পাশে আসন ছিল। বারান্দার অপর প্রান্তে একটি চার ফুট চওড়া বর্গাকার টেবিল ছিল। চারটি খুঁটির উপর খিলানযুক্ত ছাদ, যার উপরে রয়েছে একটি ছামিয়ানা। তার মধ্যখানে প্যাট্রিয়ার্কের জন্য একটি চেয়ার রাখা হয়েছে। সেখান থেকে তিনি বারান্দার উভয় পার্শ্ব পরিষ্কার দেখতে পাবেন। তার দু পাশে দুটি চেয়ারে দুজন আর্চবিশপ বসেছেন। অন্যান্য আর্চবিশপ, সন্ন্যাসী ও অতিথিরা লম্বা টেবিলে বসেছেন। তারা আমাদের জন্য যে মাংস এনেছিলেন তা ছিল বিভিন্ন ধরনের পলান্ন। আলাদা আলাদা পাত্রে মাছ, তার মধ্যে মজাদার ট্রাউট মাছও রয়েছে। পলান্ন আনা হয়েছে চল্লিশটি চওড়া প্লেটে, যা ভালভাবে পরিপূর্ণ ও এত বড় যে একজন মানুষের বোঝার সমান। তারা সকল কিছু প্যাট্রিয়ার্কের সামনে মাটিতে রাখল। তিনি প্রার্থনা করলেন এবং সকলকে অভিনন্দন জানালেন। ছয়জন বিশপ হাতা দিয়ে বড় প্লেট থেকে মাংস বের করলেন। সেগুলোকে ছোট ছোট বর্তনে রাখলেন। এরপর দুপাশের টেবিলে পরিবেশন করলেন। প্রত্যেকের মৃন্ময়পাত্রে দেওয়া হল উৎকৃষ্ট মদ। শেষ হলে পূর্ণ করে দেওয়া হয়। প্যাট্রিয়ার্ক ও দুই আর্চবিশপ দুটি ডিম ও কাঁচা ভেসজ ছাড়া কিছুই খেলেন না। টেবিলে বসা আর্চবিশপেরা আর কিছু করেননি।

    ভোজ শেষে একজন বিশপ একটি কাগজ, কলম ও কালি নিয়ে এলেন। এবং সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন, গির্জার উন্নতির জন্য কে কী দান করবেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রস্তাব করে তার ভক্তি অনুসারে, বিশপ ব্যক্তিদের নাম লিখলেন এবং তারা যে পরিমাণ বলেছেন তা লিখে রাখলেন। যা তিনি পরদিন এসে সংগ্রহ করবেন। সেখানে কয়েকজন ধনী বণিক ছিলেন, তারা দুই টোমান[4] দিবে, কিন্তু নিকৃষ্ট চাকরেরা এক বা কমবেশি টোমানের কথা বলল। বিশপ লেখা শেষ করলেন, টেবিলগুলো সব পরিষ্কার করা হল, তখন তারা তরমুজ ও অন্যান্য ফল নিয়ে এল। অল্প সময় পরে সন্ধ্যা প্রার্থনার জন্য গির্জার ঘণ্টা বাজল, সকলে গির্জায় চলে গেল।

    সান্ধ্য প্রার্থনার পর প্যাট্রিয়ার্ক আমাকে মহিষের লড়াই দেখতে ডেকে পাঠালেন, এদেশে লড়াইয়ের জন্য প্রচুর মহিষ আছে। এগুলো মধ্যে কিছু আমৃত্যু লড়াই করে। মহিষীরা হল দুগ্ধ ভাণ্ডার। দুধ দিয়ে তারা মাখন ও পনির তৈরি করে। অন্যান্য দুধের সাথেও মিশ্রিত করে। একেকটি মহিষী প্রতিদিন বাইশ পিন্ট (২.৭৫ গ্যালন) দুধ দেয়।

    খেলা দেখার জন্য তারা আমাদের একটি পাঁচিল ঘেরা চত্বরে নিয়ে এল, সেখানে আটটি মহিষ ছিল। তাদের একটিকে অপরটির বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য তারা লাল কাপড় দেখাতে লাগল। তারা এতই ক্ষেপে উঠেছিল যে শিঙের আঘাতে তাদের দুটি সেখানেই মারা গেল। তাদের মধ্যে একটিও অবশিষ্ট ছিল না যে মারাক্তকভাবে খোড়া হয়ে যায়নি। খেলার শেষের দিকে তারা প্রচুর পরিমাণ কাঠ নিয়ে আসে, সেগুলোকে তারা আগুন জ্বালানোর জন্য সাজিয়ে রাখে। যখন কাঠগুলো তাদের কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বড় স্তূপে পরিণত হয়, একজন আর্চবিশপ মালিক এবং চাকর তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে সাদা মোমবাতি তুলে দেন, এরপর সকলে আর্চবিশপের নির্দেশনা মেনে নেয়। মোমবাতিতে আগুন ধরানো হল। ধর্মযাজক ও সাধারণ মানুষ, সকলেই সে স্তূপের চারিদিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করলেন। এই সময়ে বিশপের যাজকদণ্ড হাতে নিয়ে প্যাট্রিয়ার্ক স্তোত্র গাইলেন। কাঠের স্তূপে আগুন জ্বালানোর সময় তারা সম্মানার্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হল। একজন বণিক গির্জায় বাতি জ্বালানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে তৈল দান করলেন, অন্য একজন তার চেয়ে বেশি কিছু দান করলেন। তৃতীয় একজন তার চেয়ে আরও বেশি দানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। স্তূপে আগুন দেওয়ার সম্মান তাকে দেওয়া হয়েছিল যে সবচেয়ে বেশি দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সাথে সাথে তাদের সকলে প্রত্যেক মোমবাতি বের করলেন। তারা এটাকে মহামূল্য কর্তব্য বলে মনে করে। তারা বিশ্বাস করত যে এই মোমবাতিগুলো আগুন ধরিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে তারা ঝড় ও জাহাজডুবি থেকে রক্ষা পাবে। তারা বলে যে, কুমারী মেরী প্রসবের চল্লিশ দিন পরে যোশেফ ও তার পুত্রকে নিয়ে জেরুসালাম গিয়েছিলেন। তারা একটি মন্দিরে বৃদ্ধ সিমেওনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে গান গাইতে শুরু করেন। প্রভূ, এখন আপনার দাসকে দাও… ইত্যাদি। গান শেষ হলে উপস্থিত সকলে কাঁদতে শুরু করল যে, খ্রিষ্ট জন্মগ্রহণ করেছেন। সারা শহরে এইকথা প্রচার হয়ে গেল। এই সময় ছিল রাত, প্রত্যেকে তাদের হাতের আলো নিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে এল। কেউ কেউ তাদের দরজার সামনে আগুন জ্বালিয়ে দিল। তারা সকলেই খ্রিষ্টের সাথে বেরিয়ে পড়ল। এটি আর্মেনীয়দের কাছে মোমবাতি উৎসব দিবসের মত। তাদের ভাষায় এর নাম Ter en Areche? প্রভূ কোথায়? আরমেনীয় প্রভূ ও দাসেরা সারারাত মদ পান করে এই অবাধ, উন্মুক্ত উৎসবটি উদ্‌যাপন করে। তখন প্যাট্রিয়ার্ক গির্জাকে মূল্যবান অলঙ্কারাদি দিয়ে সাজসজ্জায় নিরত থাকেন।

    আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে, মুসলমানদের শাসনাধীনে থেকেও গির্জাগুলোর এত ধনসম্পদ ছিল। একশ বছর আগেও এই প্যাট্রিয়ার্কেল গির্জাটির খুব খারাপ অবস্থা ছিল। কিন্তু যখন মহান বাদশা আব্বাস আর্মেনীয়ার উপর দিয়ে বাণিজ্যিক পথ চালু করলেন, তারা নিজেদের অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তুলল। কেননা, এতে তারা প্রচুর লাভবান হয়েছে এবং তারা একটি মহান ব্রত হিসেবে গির্জাকে অনেক দান করেছে যাতে খ্রিষ্টীয় জগতের যেকোন গির্জার মত সমৃদ্ধ অলঙ্কারাদি রয়েছে। গির্জার পাদরি ও গায়কদের আসনকে ভেনিসীয় সোনা দিয়ে আস্তরণ করা হয়েছে। পাদরি ও গায়কদের শানের পথ, বেদীর সিঁড়ি উন্নত গিলাপে মোড়ানো। সকলে জুতা খুলে রেখে গির্জায় প্রবেশ করেছিল। আরমেনীয়রা ইউরোপীয়দের মত নতজানু হয় না, সর্বদা শিরোন্নত করে রাখে। সমবেত সঙ্গীত শ্রবণের সময় তারা দেশীয় রীতিতে আসন গ্রহণ করেছিল কিন্তু গসফেল পাঠের সময় তারা উঠে দাঁড়াল। সমস্ত সময় তারা মাথা ঢেকে রেখেছিল যতক্ষণ না বিশপ পাঠ শেষ না করেছে। তখন তারা তাদের টুপি (বনেট) খুলে ফেলে এবং মাটিতে তিনবার চুম্বন করেছিল। বেদীতে একটি ক্রস আছে, সেখানে ছয়টি সোনার মোমবাতি রয়েছে। বেদীর সিঁড়িতে পাঁচ ফুট উঁচা চারটি রূপার মোমবাতি রয়েছে। যখন তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ স্তবস্তূতি করেছিল, তখন প্যাট্রিয়ার্ক রেশমের গিলাফ লাগানো একটি চেয়ারে আসন গ্রহণ করেছিলেন। চারজন আর্চবিশপ তার ডান পাশে একটি থামে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। সমস্ত অনুষ্ঠানটি একজন আর্চবিশপের সঞ্চালনায় পরিচালিত হয়েছিল। তার দুই পাশে ছিল দুজন বিশপ। নির্দিষ্ট প্রার্থনা শেষে আর্চবিশপ যেখানে গসফেল পাঠ করেছিলেন সেখান থেকে বইটি তুলে প্যাট্রিয়ার্ক, আর্চবিশপগণ, বিশপগণ ও অন্যান্যদের দিলেন যাতে সকলে চুম্বন করেছিল। বইয়ের প্রচ্ছদের একপাশে দুটি স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে যা ক্রিষ্টালে আবৃত। এই পাশেই বইটিকে চুম্বন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই প্যাট্রিয়ার্কের হস্তচুম্বন করতে এসেছিল তাই তিনি একাকী বসেছিলেন।

    এরিভান থেকে দশ লীগ উত্তর দিকে একটি বড় হ্রদ রয়েছে, সেখানে আছে একটি দ্বীপ। তার উপর অতিমনোহর একটি মঠ তৈরি করা হয়েছিল। সন্ন্যাসীরা সেখানে বাস করে, তারা এত বেশি কৃচ্ছ্রতা অবলম্বন করে যে বছরে চার বারের বেশি মাছ বা মাংস খায় না। এই চারদিন ব্যতিত তারা কখনো একে অপরের সাথে কথা বলে না। বছরের অবশিষ্ট সময় তারা শুধু ভেষজই খেয়ে থাকে যা তারা বাগান থেকে সংগ্রহ করে। তারা বলে মাখন বা স্নেহজাতীয় খাবার জন্য এই উপবাস ব্রত নয়। পাশের গ্রাম থেকে আনা রুটি খায় তারা, এবং এই দ্বীপটি চমৎকার সব ফলে পরিপূর্ণ।

    এরিভানের কাছাকাছি হ্রদের একপাশে একটি বড় সমভূমি রয়েছে, সেখানে আছে ছয়টি মঠ। যার মধ্যে একটি সম্পূর্ণরূপে পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। এর খুঁটিগুলো একটি শক্ত শিলার উপর স্থাপিত রয়েছে। আর্মেনীয়রা তাদের ভাষায় এটিকে চার্চ কিকার্ট বলে এবং তুর্কিরা বলে গুইউরগিছে। অর্থাৎ, দেখ এবং দূরে থাক। আর্মেনীয়দের ঐতিহ্য অনুসারে এই চার্চে বর্শা রাখা হয় যা দিয়ে খ্রিষ্টের পার্শ্বদেশ ছিদ্র করা হয়েছিল। যে চিত্রটি আমি এইস্থানে এঁকেছি।

    এই বর্শাটির প্রতি আর্মেনীয়দের রয়েছে প্রচুর ভক্তিশ্রদ্ধা। তার বলে, সেন্ট ম্যাথিউ কর্তৃক এটি এখানে আনা হয়েছিল।

    এরিভান থেকে পাঁচ লীগ অগ্নিতে আরারাত পর্বতের শুরু; এটি সর্বদা নূহের জাহাজের বিশ্রাস্থল হিসেবে বিখ্যাত। এই পর্বত থেকে আধা লীগ দূরে সমতল ভূমির মধ্যে একটি ছোট টিলার উপর একটি গির্জা দাঁড়িয়ে আছে। এটির কাছে কূপের মত কয়েকটি গভীর গর্ত রয়েছে। তারা বলে যে, এই গর্তগুলোর মধ্যে একটিতে আরমেনীয় রাজা সেরডা সেন্ট গ্রগরিকে নিক্ষেপ করেছিলেন, কেননা তিনি তার মিথ্যা ঈশ্বরের উপাসনা করতে রাজি হননি। এই গির্জা ও এরিভানের মাঝখানে রয়েচে প্রাচীন আর্টেক্সেটের ধ্বংসাবশেষ, আর্মেনীয় রাজাদের আবাসস্থল, যাতে অনুমান করা যায় যে এটি একটি বড় শহর ছিল। এছাড়াও একটি সুরম্য প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষও দেখা যায়।

    এরিভানের অবস্থান ৬৪ ডিগ্রি ২০ মিনিট দ্রাঘিমাংশ ও ৪১ ডিগ্রি ১৫ মিনিট অক্ষাংশে। এটি মানবজীবনে প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। তবে, বিশেষ করে এখানে উৎকৃষ্ট ওয়াইনে ভরপুর। এটি পারস্যের একটি সেরা প্রদেশ। এটি উর্বর মাটির কারণে ও বাণিজ্যিক কাফেলাগুলোর প্রধান চলাচল পথ হওয়ায় বাদশাহকে প্রচুর রাজস্ব প্রদান করে। শুধুমাত্র সুবাদার যাকে এরিভানের খান বলা হয়, তার বার্ষিক রাজস্ব ২০০০০ টোমান, যা ৮৪০০০০ লিভার সমান। এটি তুর্ক ও পারস্য উভয় সাম্রাজ্যের সীমানান্তে অবস্থিত। বহুবার এটি তুর্কি ও পারস্যের কর্তৃক দখল পুনর্দখল হয়েছে। যার কারণে পুরোনো নগর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। তারা নতুন করে এটিকে নির্মাণ করেছে। এই দিকে ৮০০ পদক্ষেপ, পাথরের উপরে যার পাদদেশে রয়েছে একটি তীব্র স্রোতস্বিনী। এটিকে সাঙ্গুই-সিজা বলা হয়। অনেক জায়গায় এটি সুগভীর ও পাথরে পরিপূর্ণ। তিনটি খিলানের উপর একটি সুদৃশ্য সেতু পার হতে হবে। এটির স্থানে স্থানে রয়েছে কুঠুরি যাতে তীব্র গরমে খান বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারেন। এটি মাছে পরিপূর্ণ, বিশেষ করে ট্রাউটে যা যারপরনাই প্রিয়। এই নদীটি এরিভান থেকে ২.৫ লীগ উত্তরে গিগাগুনি নামক হ্রদ থেকে প্রবাহিত হয়েছে। এবং পড়েছে আরাসে যা দক্ষিণে তিন লীগের বেশি নয়। যদিও শহরটি পশ্চিমে নদী দ্বারা সুরক্ষিত তবু এটি শক্তিশালী নয়। কেননা, অন্য দিকের পাহাড় থেকে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এবং এটি একটি পাথরের উপর নির্মিত এবং দুর্গের পরিখাগুলো তিন চার ফুটের বেশি গভীর নয়। কোথাও কোথাও সুউচ্চ দেওয়াল ও কয়েকটি পর্যবেক্ষণ মিনার দিয়ে সুরক্ষিত। কিন্তু দেওয়ালগুলো মাটির তৈরি। বেশির ভাগ বাড়ি বৃষ্টির ধারা ও কামানের তোপে নষ্ট হয়ে যায়।  এরিভানের উত্তর-পশ্চিম দিকের অংশটি শহরতলীর মত হলেও শহরের থেকে ঘনবসতিপূর্ণ। কেননা, সেখানে আরমেনীয় খ্রিষ্টানদের সাথে বণিক, কারিগরেরা বাস করে। তাদের চারটি গির্জা ও একটি মঠ রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে তারা একটি সুরম্য অতিথিশালা নির্মাণ করেছে শহরের এই অংশে। শহরে শুধু সেনাকর্মকর্তা ও সৈনিকদের নিয়ে খান বাস করেন। খানের বাসস্থান নদীর তীরে অবস্থিত। গর্ভনর একটি খুবই ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, এবং সীমান্ত রক্ষার জন্য তার কাছে সর্বদা পর্যাপ্ত বাহিনী থাকে। এরিভানে গ্রীষ্মকাল খুব গরম। সে গরমের সময়ে তিনি পর্বত শিখরে তাঁবুতে বাস করেন। কোন কাফেলা এলে তার সংবাদ শাহকে পাঠাতে হয়। এবং সেখানে যদি কোন রাষ্ট্রদূত আসেন, তবে তিনি তাকে তার খরচ বহনে বাধ্য করেন। এবং পরবর্তী গর্ভর্নরের অঞ্চলগুলোতে যেতে পথখরচ প্রদান করতে হয়। অন্য সুবাদারেরাও একই কাজ করতে বাধ্য। যাতে পারস্যের রাষ্ট্রদূতেরা শাহের অঞ্চলগুলোতে থাকতে কোন রকম খরচ করতে বাধ্য না হন। নগর থেকে চার লীগ দূরে উঁচু পর্বতমালা, সেখানে চালদিয়ার দিকের উষ্ণ ও সূর্যদগ্ধ গ্রামগুলোতে বসবাসকারী বিশ হাজার আদিবাসী তাদের পশুদের জন্য চারণভূমি খুঁজতে আসে। শরতের শেষে তারা আবার স্বদেশে ফিরে যায়। আমি এই পার্বত্যভূমির তুলনা করতে পারি না, তার উপত্যকা ও নদীগুলোর জন্যই হোক বা ভূপ্রকৃতির জন্যই হোক, আমার দেখা এর যেকোন অংশই সুইজারল্যাণ্ডের সে অংশগুলোর চেয়ে উন্নত যাকে তারা ভক্সের দেশ বলে। এখানে আদিবাসীদের মধ্যে একটি ঐতিহ্য রয়েছে, যে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ আল্পস ও মাউণ্ট জুরার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাস করে তারা আলেকজাণ্ডারের সেনাবাহিনীতে অশ্বারোহী বিভাগ গঠন করেছিল এবং তাঁর বিজয়ে অবদান রেখেছিল। তারা আর্মেনীয়ার এই অংশে বসবাস করে, যাকে তারা নিজেদের স্বদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। টোকাট থেকে তুরিস পর্যন্ত বেশির ভাগ বাসিন্দাই খ্রিষ্টান। যে বিশাল স্থলভাগকে প্রাচীনেরা আর্মেনীয়া প্রদেশ বলে তাতে একজন মুসলমানের জন্য পঞ্চাশজন আর্মেনীয়ের সম্মুখীন হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। এরিভানে অনেক প্রাচীন আর্মেনীয় পরিবার বাস করে। এটাই তাদের স্বদেশ। কিন্তু তারা সুবাদারদের দ্বারা নির্যাতিত। তারা আদালতের এখতিয়ারের বাইরে, তাই তারা যা খুশি তাই করতে পারেন। এই শহরটি রাজ্য থেকে বেশি দূরে নয়, যেখান থেকে রেশম আসে। এটি সেই জায়গা যেখানে সমস্ত ক্রেতা ও বিক্রেতারা অধিষ্ঠান করে। তবে এরিভান বা পারস্যের অন্য কোন অংশেই বণিকেরা তুর্কির মত শুল্কদপ্তরে তাদের ঘাঁটগুলো খুলতে দেয় না। তারা শুধুমাত্র মহাসড়ক সুরক্ষিত করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক প্রদান করে; এটাকে তারা বলে রাহাবার শুল্ক। তারা এই শুল্ক গ্রহণ করে রাহাবারদের জন্য।

    পারস্যের খান বা রাজ্যপাল বিদেশীদের সাথে সদাচারী, বিশেষ করে যাদের তারা পছন্দ করে বা যারা তাদের কৌতূহল উদ্দীপক কিছু দেখায়। প্রথমবার আমি যখন পারস্য গিয়েছিলাম, আমার সাথে একজন তরুণ ঘড়িনির্মাতাকে নিয়েছিলাম। এরিভানে এসে আমি তাকে খানের নিকট নিয়ে গেলাম, তিনি ছিলেন সুবাদার। এটা সেই সময় যখন হাতঘড়ি পারস্যে খুবই বিরল ছিল। খান বুঝতে পারলেন যে তরুণটি কোন পেশায় জড়িত। তিনি বললেন, সে-ই পারস্যে আসা প্রথম  ঘড়িনির্মাতা। অতঃপর তিনি মেরামত করার জন্য তরুণকে একটি ঘড়ি এনে দিলেন। তিনি তার কাজ দেখে খুবই খুশি হলেন। আমাদেরকে তিনি তাঁর পাশের কক্ষে থাকতে দিলেন এবং প্রতিদিন তাঁর সাথে আমাদেরকে পান করাতেন। তিনি প্রকৃতই মদ্যপ ছিলেন, তিনি আমাদের বিকেল চারটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তার সাথে পান করতে বাধ্য করেছিলেন। তার বাগানের এমন একটি জায়গায় যেখানে তিনি পান করার জন্য পানপাত্রগুলো আনিয়েছিলেন। ইনি সেই ব্যক্তি যিনি সুলতান মুরাদের হাতে এরিভানকে তুলে দিয়েছিলেন। এরপর তার সাথে কনস্টান্টিনোপল গিয়ে এবং তাকে মদপান শিখিয়ে তার প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন। সুলতান মুরাদ নগর রক্ষার জন্য ২২০০০ জনের একটি বাহিনী রেখে গেলেন। কিন্তু পারস্যের শাহ সেফি একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী নিয়ে এটিকে আক্রমণ করেন। তিনি শহর প্রতিরক্ষক পাহাড়গুলোর একটির পাদদেশে নিজের অবস্থান সুসংযত করলেন। তিনি আটটি কামান দিয়ে অনবরত গোলাবর্ষণ করতে লাগলেন। চতুর্থ দিনে তিনি দূর্গ বিদীর্ণ করলেন। যদিও তিনি কাপুরুষের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তবু তিনিই প্রথম আক্রমণকারী যিনি এই শহর দখল করেছিলেন। তিনি সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে হত্যা করলেন কেননা তারা তার শমন মেনে নেয়নি। এই কারণে, সুলতান মুরাদ পরবর্তীতে শাহ সেফিকে রাজ্যচ্যুত করেছিলেন, তাও কোন মহৎ উপায় নয়। বিজয়ী হয়ে বাগদাদে প্রবেশ করার জন্য তিনি সমস্ত

    পারস্যবাসীদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তার কথা তুলে নেন, এবং পারস্যবাসীদের জীবন বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দান করেন।

    এরিভান ও শহরতলীর মানচিত্র

    A. শহর ও দুর্গ। B. আরমেনীয় খ্রিষ্টান অধ্যুষিত শহরতলী। C. চার্চ। D. মঠ বা কনভেন্ট। E. সাঙ্গুই-সিজা নদী। F. পাথরের সেতু। G. কাফেলার জন্য মহাসড়ক। H. দূর্গ, যা শাহ সেফি (সাম মির্জা) নগর আক্রমণ করার জন্য নির্মাণ করেছিলেন। I. পর্বত থেকে প্রবাহিত নদী। K. টরিসের মহাসড়ক। L. জর্জিয়ার প্রধান সড়ক টেফলিসের পথ; সে পর্বতের পথ যেখানে এরিভানের খান গ্রীষ্মে দুবার পান করতে যান। M. বিক্রয়কেন্দ্র, পণ্য বিক্রয়ের জন্য।


    • [1] প্রাচীন খ্রিষ্টান যেমন, আলেকজান্দ্রিয়া, অ্যান্টিওক, কনস্টান্টিনোপল, জেরুসালেম ও প্রাচীন রোমের প্রধান বিশপ; মানবজাতির পিতা হিসেবে বিবেচিত বাইবেলের যেকোন ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে আব্রাহাম, আইজ্যাক ও জ্যাকব এবং তাদের পূর্বপুরুষ বা জ্যাকবের পুত্রগণ; Patriarch.
    • [2] মাস্কেট হল, দীর্ঘ নল সহ পদাতিকের ব্যবহৃত হালকা বন্দুক, সাধারণত নিভাঁজ ছিদ্রযুক্ত, কাঁধে রেখে গুলি করার উপযোগী। মাক্সেট শটের দূরত্ব নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে, ফরাসীদের মতে এক মাস্কেক শট ৩০০ গজের সমান।
    • [3] এক বা একাধিক বাড়ি নিয়ে গঠিত খ্রিষ্টান ধর্মীয় সম্প্রদায় নান বা কুমারী সন্ন্যাসিনীদের বাসস্থান; কনভেন্ট।
    • [4] এক টোমান সমান ১০,০০০ মুদ্রা।
    তাহের আলমাহদী
    তাহের আলমাহদী
    জন্ম কুমিল্লায়। পড়াশোনা করেছেন লাকসাম নওয়াব ফয়েজুন্নেসা সরকারি কলেজ ও নোয়াখালী সরকারি কলেজে। রিযিকের সন্ধানে দেড় যুগের বেশি সময় আছেন সাউদী আরবে। সাহিত্যের চর্চা ছাত্রজীবন থেকে হলেও কোন লেখাই প্রকাশিত হয়নি। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের বশেই গড়ে তুলেছে সাহিত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এডুলিচার। এছাড়া বিনামূল্য গ্রন্থ সরবরাহের জন্য আছে এডুলিচার অনলাইন লাইব্রেরি এবং সম্পাদনা করছেন অনলাইন সাহিত্য পত্র ‘জেগে আছি’।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here
    Captcha verification failed!
    CAPTCHA user score failed. Please contact us!

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব সাত

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : জাঙ্গান, সুলতানিয়া ও অন্যান্য স্থান হয়ে তাউরিস থেকে ইস্পাহানে যাওয়ার সাধারণ রাস্তা। আমাদের এখন তাউরিস ছেড়ে ছয় লীগ দূরে হ্রদে ফিরতে হবে,...

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব ছয়

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ : আরডেভিল ও ক্যাসবিনের মধ্য দিয়ে তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপলিটান সড়কের ধারাবাহিকতা। তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত কাফেলা সাধারণত চব্বিশ দিনের যাত্রা করে। প্রথম...

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব পাঁচ

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ : এরিভান থেকে তাউরিস পর্যন্ত একই রাস্তার ধারাবাহিকতা। এরিভান ও টাউরিসের মধ্যে কাফেলা যাতায়াত করতে সাধারণত দশদিন সময় লাগে; এবং ন্যাকসিভান উভয়ের প্রায়...

    তাভেরনিয়ের ভ্রমণ : পর্ব তিন

    কাফেলাগুলো একই ধারায় যাত্রা করে না। কর্মযজ্ঞে কখনও তারা দ্রুত আসে, কখনও দেরীতে আসে। এটা নির্ভর করে জল ও সরাইখানা অথবা তাঁবু স্থাপনের উপযুক্ত...

    তাভেরনিয়ের ভ্রমণ : পর্ব দুই

    কনস্টান্টিনোপল থেকে ইস্পাহান, এই পথেই লেখকের প্রথম পারস্য ভ্রমণ। এটা কদাচিৎ যে কোন কাফেলা কনস্টান্টিনোপল থেকে পারস্যে যায়; কিন্তু বুরসা থেকে তারা প্রতি দুই মাসেই...

    তাভেরনিয়ের ভ্রমণ : পর্ব এক

    একজন মানুষ একই সময়ে ও একই উপায়ে এশিয়া ভ্রমণ করতে পারে না, যেমনটি তারা ইউরোপ ভ্রমণ করে। শহর থেকে শহরে সাপ্তাহিক কোন গাড়ি নেই,...

    লেখক অমনিবাস

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব পাঁচ

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ : এরিভান থেকে তাউরিস পর্যন্ত একই রাস্তার ধারাবাহিকতা। এরিভান ও টাউরিসের মধ্যে কাফেলা যাতায়াত করতে সাধারণত দশদিন সময় লাগে; এবং ন্যাকসিভান উভয়ের প্রায়...

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব ছয়

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ : আরডেভিল ও ক্যাসবিনের মধ্য দিয়ে তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপলিটান সড়কের ধারাবাহিকতা। তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত কাফেলা সাধারণত চব্বিশ দিনের যাত্রা করে। প্রথম...

    আরব্য রজনী : রাজা শাহরিয়ার ও তার ভাইয়ের গল্প

    রাজা শাহরিয়ার ও তার ভাইয়ের গল্প প্রাচীন মানুষদের ইতিহাসে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে যে, প্রাচীনকালে ভারত ও চৈনিক দ্বীপপুঞ্জে সাসানীয় সাম্রাজ্যের একজন রাজা ছিলেন। তার...

    আরব্য রজনীর দ্বিতীয় রজনী

    যখন দ্বিতীয় রাত হল, দুনিয়াজাদ শাহরাজাদকে বললেন, ‘আপু, আমাদের জন্য তোমার বণিক ও ইফ্রিতের গল্প শেষ কর।’ ‘সানন্দে,’ জবাব দিল শাহরাজাদ, ‘যদি রাজা অনুমতি প্রদান...

    আলমগীর বাদশার মৃত্যু রহস্য

    আলমগীর বাদশা মারা গিয়েছে। অনেকদিন আগের কথা, তেতুঁল তলার পুকুরের বাঁধানো ঘাটের তালের গুড়ির নিচে তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামময় রাষ্ট্র হয়েছিল, দুষ্ট জীন তাকে...

    আরব্য রজনীর তৃতীয় রজনী

    তৃতীয় রজনীতে দুনিয়াজাদ তার বোনকে গল্পটি শেষ করতে বলল। ‘সানন্দে,’ বলে শুরু করল শাহরাজাদ: ‘হে সৌভাগ্যবান রাজা, আমি শুনেছি যে তৃতীয় বৃদ্ধ ইফ্রিতকে অন্য...

    এই বিভাগে