সপ্তাহের সেরা

    আখ্যাত রচনা

    শিশুতোষবাংলা সন্ধি

    বাংলা সন্ধি

    বুতান মোহিতলাল মজুমদারের ‘কালবৈশাখী’ কবিতা পড়ছিল। পড়তে পড়তে ‘আজিকে যতেক বনস্পতির ভাগ্য দেখি যে মন্দ’ এই জায়গায় এসে থমকে গেল।

    -আচ্ছা দাদু, ‘যতেক’ শব্দের মানে কী?

    – ‘যতেক’ শব্দের মানে যে পরিমাণ বা যত সংখ্যক। কবিতায় এই ধরনের শব্দের ব্যবহার আছে। এই শব্দটা এসেছে সন্ধি করে। যত+এক = যতেক।

    মান্তু তার পড়া করছিল। সে বলল,’ দাদু, যত+এক তো যতৈক হবে। তুমি আমাদের বলেছিলে সর্ব+এব = সর্বৈব। তা কি সর্বৈব ভুল? কবিতায় বুঝি সন্ধির নিয়ম মানা হয় না?

    – নারে দিদিভাই, সর্বৈব শব্দ তৈরি হয়েছে সংস্কৃত সন্ধির নিয়মে। একটা কথা তোদের বলেছিলাম যে রাজায় রাজায় সন্ধি হয়। তার মানে তৎসম শব্দের সঙ্গে তৎসম শব্দের সন্ধি। সেগুলো হয় সংস্কৃত সন্ধির নিয়মে। তোদের বলেছিলাম তো যে বাংলা সন্ধির নিয়মগুলো আলাদা। যদিও কোন কোন সময় সংস্কৃত সন্ধির নিয়মেও বাংলা সন্ধি হয় তবুও বাংলা সন্ধির কয়েকটা আলাদা নিয়ম আছে। বাংলাতেও স্বরসন্ধি আর ব্যঞ্জনসন্ধি আছে।

    – আর বিসর্গসন্ধি? – বুতান জানতে চায়।

    – না। বাংলা বিসর্গসন্ধি নেই। তার কারণ বিসর্গ যুক্ত শব্দগুলোকে আমরা বাংলায় বিসর্গ ছাড়াই ব্যবহার করি তাই খাঁটি বাংলা সন্ধিতে বিসর্গসন্ধির দরকার হয় না।

    – তাহলে আমাদের বাংলা সন্ধির নিয়মগুলো শিখিয়ে দাও। – মান্তু আগ্রহ দেখায়।

    – আচ্ছা, বলছি। পাশাপাশি দুটো স্বরবর্ণ থাকলে তার একটা লোপ পেয়ে যায়। কখনও তা পূর্বপদের শেষের স্বর হতে পারে আবার কখনও তা পরপদের গোড়ার স্বরও হতে পারে। এই যে বুতান পড়ছিল ‘যতেক’। এই শব্দের পূর্বপদের শেষে একটা ‘অ’ আছে তা লোপ পেয়েছে। ঠিক তেমনি অর্ধ+এক = অর্ধেক, আধ+এক = আধেক, দশ+এক = দশেক, মিথ্যা+উক = মিথ্যুক, ইত্যাদি।

    – ‘উক’ মানে কী? – এবার বুতানের প্রশ্ন।

    – ‘উক’ একটা বাংলা প্রত্যয়। সাধারণত খারাপ স্বভাব বোঝাতে এই প্রত্যয় ব্যবহার হয়। যেমন, কাম+উক = কামুক, পেট+উক = পেটুক, নিন্দা+উক = নিন্দুক, ইত্যাদি।

    আবার কখনও দেখবি দুটো বাংলা সন্ধির ফলে পরের স্বর লোপ পেয়ে যাচ্ছে। যেমন, কোটি+এক = কোটিক, খানি+এক = খানিক, ছেলে+আমি = ছেলেমি, মেয়ে+আলি = মেয়েলি, ইত্যাদি। এই আমি, আলি এগুলো ভাব বোঝাতে বাংলা প্রত্যয়।

    আবার দেখবি পরপদে যদি শুধু ‘এ’ প্রত্যয় বা বিভক্তি থাকে তবে ‘এ’ বদলে ‘য়’ হয়ে যায়। যেমন, পাতা+এ = পাতায়, আলো+এ = আলোয়, কলকাতা+এ = কলকাতায়, ঢাকা+এ = ঢাকায়, ইত্যাদি।

    – তাই যদি হয় তাহলে মুর্শিদাবাদ+এ = মুর্শিদাবাদে হল কেন? মুর্শিদাবাদয় হওয়া উচিত ছিল। – বুতানের প্রশ্নবাণ।

    – বাঃ! চমৎকার প্রশ্ন করেছিস। একটা কথা তোদের বলা হয়নি যে বাংলা সন্ধি পুরোই উচ্চারণের হয়। পূর্বপদে স্বর উচ্চারণও থাকতে হবে। মুর্শিদাবাদ শব্দটা অ-কারান্ত হলেও উচ্চারণে তা হস্ যুক্ত অর্থাৎ ‘মুর্শিদাবাদ্’ তাই এই সন্ধিতে এ থাকবে। কিন্তু ‘ভাল’ শব্দটি তো উচ্চারণে ‘ভালো’ তাই এই শব্দের পর ‘এ’ এলে তা হয়ে যাবে ‘ভালয়’। ভালয় ভালয় এখান থেকে চলে যাও। আবার ‘ভাল’ শব্দের অর্থ যেখানে কপাল তার উচ্চারণ ‘ভাল্’ আর এই শব্দের পর ‘এ’ এলে তা হয়ে যাবে ‘ভালে’। ভালে তিলক আঁকা।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here
    Captcha verification failed!
    CAPTCHA user score failed. Please contact us!

    বানান সংকট

    বুতান এসে বলল, 'জান দাদু, আমার বাংলা লিখতে গেলে অনেক বানান ভুল হয়। ঠিক করব কীভাবে? সব বানানই কি মুখস্থ করে রাখব?' বুঝলাম যে আজ...

    লেখক অমনিবাস

    আ মরি বাংলা ভাষা : তিন

    ৮ 'ই' আর 'উ' এর প্রভাবে 'অ'কারান্ত শব্দের উচ্চারণে বিকৃতির কথা বলেছি। 'য'-ফলার কথাও বলেছি। এবার অন্য দুটি বর্ণের কথা বলব, যাদের প্রভাবেও 'অ' এর...

    বিভক্তি

    আমার ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছি, মান্তু মাটিতে বসে একটা পাখির ছবি আঁকতে ব্যস্ত, বুতান এসে বলল, 'দাদু, বিভক্তি কাকে বলে?' মান্তু পাখি আঁকা থামিয়ে...

    পদ

    মান্তু গুনগুন করছিল, '... আমার সুরগুলি পায় চরণ...' বুতান জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা দাদু, চরণ মানে তো পা তাহলে সুর কী করে পা পাবে?' - একটা শব্দের...

    আ মরি বাংলা ভাষা : দুই

    ৫ এর আগে লিখেছিলাম যে শুরুতে 'অ' উপসর্গ থাকলে আর পরে যদি 'ই', 'ঈ', 'উ', বা 'ঊ' বা 'ই'কারান্ত, 'ঈ'কারান্ত, 'উ' বা 'ঊ'কারান্ত বর্ণও থাকে...

    বাংলা উচ্চারণ প্রসঙ্গে

    ই, ঈ / উ, ঊ শিরোনামটুকু পড়ে অনেকেরই ভুরু কুঁচকে যেতে পারে। অনেকেই ভাবতে পারেন যে জন্মের পর থেকেই তো বাংলা উচ্চারণ শুনে আসছি আর...

    উপসর্গ

    অনুসর্গ তো আমরা শিখেছি। অনুসর্গ যে বিভক্তির অভাব মেটাচ্ছে তাও জেনেছি। উপসর্গও কি তাই? - বুতানের স্কুলে বোধ হয় এখন উপসর্গ শেখান হচ্ছে। - না।...

    এই বিভাগে