সপ্তাহের সেরা

    আখ্যাত রচনা

    অনুবাদতাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব পাঁচ

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব পাঁচ

    মূল : The Six Voyages of John Baptista Tavernier (1678)

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ : এরিভান থেকে তাউরিস পর্যন্ত একই রাস্তার ধারাবাহিকতা।

    এরিভান ও টাউরিসের মধ্যে কাফেলা যাতায়াত করতে সাধারণত দশদিন সময় লাগে; এবং ন্যাকসিভান উভয়ের প্রায় মাঝপথে। প্রথম দিনের যাত্রা হবে ধান বপন করা বড় সমভূমির উপর দিয়ে এবং বিভিন্ন ছোট ছোট নদীর জল মাড়িয়ে। পরের দিনও আপনি একই প্রকৃতির সমভূমিতে ভ্রমণ করবেন। আরাত পর্বত দেখতে পাবেন। এটি মঠে পরিপূর্ণ। এটিকে দক্ষিণে রেখে চলবেন। আরমেনীয়রা এই পর্বতকে বলে মেসেসোফার, জাহাজের পর্বত; কারণ নূহের জাহাজ এই পর্বতেই থেমেছিল। এটি আর্মেনিয়ার অন্যান্য পর্বতমালা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং অর্ধ-পথ থেকে শীর্ষ পর্যন্ত তুষারাবৃত। এটি পার্শ্বর্তী অন্যান্য পর্বতমালা থেকে উচ্চতর; আমার প্রথম ভ্রমণে পাঁচদিনের যাত্রায় আমি এটিকে পর্যবেক্ষণ করেছি। এটি আবিষ্কার করার সাথে সাথেই আরমেনীয়রা পৃথিবীকে চুম্বন করে এবং আকাশের দিকে চোখ তুলে তারা প্রার্থনা করে। তবুও খেয়াল রাখতে হবে, পর্বতটি দুই তিন মাস একসঙ্গে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দ্বিতীয় দিনের যাত্রায় আপনি যে সমভূমিগুলো অতিক্রম করবেন, মহাসড়ক থেকে দেড় লীগ দূরে দক্ষিণ দিকে দুর্দান্ত শিল্পকর্ম দেখতে পাবেন; একটি জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, যেখানে আর্মেনীয় রাজারা তাদের শিকারের সময় বসবাস করতেন; বিশেষ করে তারা যখন বনহাঁস ও সারস শিকার করতেন। পরদিন আমরা একটি গ্রামের নিকটে পৌঁছলাম, সুপেয় জলের কারণে সেখানে থাকতে বাধ্য হলাম; দশ লীগের মধ্যে আর এমন জল মিলবে না। পরদিন ভ্রমণ করতে হবে একটি গিরিপথ দিয়ে একজন একজন করে এবং অর্পা-সু নামক একটি বড় নদী পার হতে হবে যা আরাসে পতিত হয়েছে। জল কম থাকলে এটি পদচলে পার হওয়া যায় কিন্তু যখন তুষার গলে ও স্রোত ফুলে যায় আপনাকে পথ ছেড়ে দক্ষিণদিকে একলীগ দূরে পাথরের সেতু দিয়ে পার হতে হবে। এখান থেকে থাকার জন্য আপনাকে কালিফাকিণ্ড নামক গ্রামে যেতে হবে, সেখানে আপনাকে বাধ্য হয়েই সুপেয় জল নিয়ে যেতে হবে। প্রথম দিনের যাত্রা একটি সমভূমির মধ্য দিয়ে, যার শেষে আপনি একটি অতিথীশালা পাবেন, যাকে বলা হয় কারা-বাগলার। এটি ১৬৬৪ সালে একটি ছোট নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছিল। এই ছোট নদীর ধারাটি এসেছে তিন চার লীগ উপরে উত্তর দিক থেকে; গেছে কারা-বাগলার থেকে অর্ধলীগ নিচে পানি জমা হয়ে পাথরে পরিণত হয়। এইসব পাথর দিয়েই এই অতিথীশালাটি নির্মিত হয়েছে। এই পাথর খুবই স্বচ্ছ ও পাতলা; যখন তারা এর প্রয়োজন মনে করে, তখন তারা স্রোত বরাবর একটি গর্ত তৈরি করে এবং তাতে একই জল দিয়ে পরিপূর্ণ করে। আট বা দশ মাসের মধ্য জল পাথরে পরিণত হয়। এই জল খুব মিষ্ট ও বাজে স্বাদ নেই; তবু আশেপাশের দেশবাসীরা তা পান করবে না, এই জল জমিতেও দিবে না। আরমেনীয়রা বলে নূহের পুত্র শাম পাথরকে ফাঁফা করে দিয়েছিল, যা থেকে এই নদীটি নির্গত হয়েছে। এটি উৎপত্তিস্থল থেকে চার পাঁচ এবং অতিথীশালা থেকে দুই লীগ পরে আরাসে মিলিত হয়েছে। এই অতিথীশালা থেকে নকসিভান ছোট যাত্রা। আরমেনীয়দের মতে নকসিভান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন নগর; এটি যে পর্বতে নূহের জাহাজ থেমেছিল তার থেকে প্রায় তিন লীগ দূরে। এর থেকেই তার নাম নকসিভান। আরমেনীয় ভাষায় নাক অর্থ জাহাজ এবং সিভান অর্থ থামান বা রাখা। এটি ছিল বড় নগর যা সুলতান মুরাদের সেনাবাহিনী দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। তুর্কিরা ধ্বংস করেছে এমন বেশ কিছু বিরল মসজদিরে ধ্বংসাবশেষ রয়েছে; কারণ তুর্কি ও পারস্যরা নিজের দখলকৃত এলাকায় খুব দ্রুত একে অপরের মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে। নগরটি অতিপ্রাচীন, আরমেনীয়ার বলে, পর্বতে জাহাজ ভিড়ানোর পর নূহ এখানেই বসবাস করেছিলেন। তারা এও বলে, তাঁকে এখানেই সমাহিত করা হয়েছিল; টাউরিসের রাস্তায় মারান্তে তাঁর স্ত্রীর কবর রয়েছে।  নাকসিভানের পাশ দিয়ে একটি ছোট নদী বয়ে চলেছে, যার জল খুবই ভাল; কারাবাগলার নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে এই প্রস্রবণ খুব একটা দূরে নয়। পূর্বে আরমেনীয়রা এই শহরে রেশমের ব্যবসা চালাত, যা এখন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে, এখানে একজন খানের শাসন বলবৎ রয়েছে। এরিভান ও টাউরিসের মধ্যবর্তী সমস্ত দেশ সম্পূর্ণ রূপে পারস্যের রাজা শাহ আব্বাস কর্তৃক ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। শেষ পর্যন্ত তুর্কিবাহিনী আহারযোগ্য কোন দ্রব্যসামগ্রী না পেয়ে নিজেদের বিনষ্ট করে ফেলে। এই উদ্দেশ্যে তিনি জুলফা ও পারস্য সংলগ্ন সমস্ত বাসিন্দা, বৃদ্ধ ও যুবা, বাবা, মা ও শিশুকে পারস্যে পাঠিয়ে দেন, যার সাহায্যে তিনি তার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশ নতুন উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন। তিনি সাতাশ হাজারেরও বেশি আরমেনীয় পরিবারকে গুইলানে পাঠিয়েছিলেন, যেখান থেকে রেশম আসে; সেখানকার রুক্ষ জলবায়ু সেই দরিদ্র পরিবারগুলোর অনেককে হত্যা করেছিল যারা ছিল হালকা বায়ুতে অভ্যস্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাঠানো হয়েছিল ইস্পাহানে, সেখানে বাদশা তাদের রেশম ব্যবসায় নিযুক্ত করেছিলেন এবং তাদের পণ্য ধার দিয়েছিলেন। তারা তাদের লভ্যাংশ দিয়ে সে ধার পরিশোধ করেছিলেন। যা দ্রুত আর্মেনীয়দের পুনরায় তাদের পায়ে দাঁড় করিয়েছিল। তারাই জুলফা নগর গড়ে তুলেছিলেন যা ইস্পাহান থেকে শুধুমাত্র সেনদেরো নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। পুরোনো নগর থেকে আলাদা করার জন্য এটিকে বলা হতো নতুন জুলফা। জুলফা ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের বাসস্থান। জনগণের তৃতীয় অংশটি ইস্পাহান ও সিরাজের মধ্যবর্তী গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু পুরোনো লোকেরা মৃত্যুবরণ করে আর অল্পবয়সীরা মুসলমান হয়ে যায়; যার ফলে সেই সমস্ত অঞ্চলে এখন দুজন আরমেনীয় খ্রিস্টানের সাক্ষাৎ পাওয়াও দুরূহ, যাদের পিতাদের সেখানে জমিতে সার দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

    নাকসিভানের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি বড় মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা ছিল বিশ্বের জমকালো স্থাপনাগুলোর একটি। কেউ কেউ বলেন যে, এটি নূহের সমাধিস্থলের স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছিল। নগর থেকে বেরুলে, এটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীর তীরে একটি উঁচু অট্টালিকা দেখা যায়, যা স্থাপত্যের অতি চমৎকার অংশ। এটি চারটি বড় গির্জার সমন্বয়ে গঠিত, যা এক ধরণের পিরামিডের মত মনে হয়। এটিকে বারোটি ছোট উঁচু ভবনের তৈরি বলে মনে হয়। কিন্তু মাঝামাঝি দিকে এটি তার চিত্র পরিবর্তন করে এবং একটি কুণ্ডলীর মত কমতে কমতে একটি বিন্দুতে শেষ হয়েছে। স্থাপনাটি পুরোটাই ইটের তৈরি, তবে ভিতরে ও বাইরে এক ধরণের পলেস্তারার প্রলেপ দিয়ে খোদাই করা ফুলের মত চিত্রিত করা হয়েছে। মনে করা হয়, তৈমুর লঙ যখন পারস্য বিজয় করেছিলেন, তখন এটি তাঁর দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।

    নাকসিভান ও জুলফার মধ্যে, প্রত্যেক দিকে উত্তর হতে দক্ষিণে, আরমেনীয় খ্রিষ্টানদের দশটি কনভেন্ট রয়েছে। এদের একটি থেকে অন্যটি দুই তিন লীগ দূরে। তারা পোপকে মান্য করে এবং তাদের স্বজাতীয় ধর্মীয় ডোমিনিকান[1] দ্বারা পরিচালিত হয়। তাদের ধর্ম বজায় রাখতে তারা সময়ে সময়ে লাতিন ও ইতালীয় ভাষা এবং দরকারী বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য তাদের দেশে জন্মগ্রহণকারী কিছু শিশুকে রোমে পাঠায়। ধারণা করা হয়, এই বসতিতে ছয় হাজারের বেশি মানুষ আছে যারা পুরোপুরি রোমান চার্চের মতবাদ অনুসরণ করে; তারা আরমেনীয় ভাষায় শুধুমাত্র উপাসনা করে ও ধর্মসঙ্গীত গায় যাতে সাধারণ মানুষ তাদের কথা শুনতে ও বুঝতে পারে। আর্চবিশপ নির্বাচিত নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোমে পাঠানো হয়। তিনি একটি বড় শহরে বাস করেন যা সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে মনোরম স্থানগুলোর অন্যতম; মানব জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সমস্ত সামগ্রীর প্রাচুর্য ছাড়াও সেখানে যে ওয়াইন ও ফল উৎপন্ন হয় তা অত্যন্ত উন্নতমানে। প্রতিটি কনভেন্ট একটি বড় গ্রামের পাশে প্রতিষ্ঠিত। প্রধানতমটি হল আবারেনার, সেখানে আমি দুবার গিয়েছি, দ্বিতীয় আব্রাঘোনেক্স, তৃতীয় কেরনা, চতুর্থ সোলেতাক, পঞ্চম কাউচকাচেন, ষষ্ঠ গিয়াউক, সপ্তম চিয়াবোনেজ, অষ্টম আরঘৌচে, নবম কাজুক, দশম কিসুক যা কুর্দিস্তান বা আসিরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। আরমেনীয়রা বিশ্বাস করে সন্তু রার্থোলোমিউ ও সন্তু ম্যাথিউকে শহীদ করা হয়েছে, যার কারণে এই দিনে তারা কিছু স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শন করে। অনেক মুসলমান শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে এখানে আসে, বিশেষ করে যারা জ্বরে ভুগেছেন। ঐ কনভেন্টগুলোর মধ্যে দুই তিনটি আছে যারা ইউরোপ থেকে আসা খ্রিষ্টানদের সভ্যভাবে আতিথ্য প্রদর্শন করে যদিও সন্ন্যাসীরা সেখানে খুবই দরিদ্র। তারা অত্যন্ত কঠোর জীবন যাপন করে, ভেষজ ছাড়া কিছুই খায় না। যা তাদের অতি দরিদ্র করে তোলে তা হল অত্যাচারী সুবাদারদের প্রায়শই পরিবর্তন, যাদেরকে তারা বড় উপহার দিয়ে বরণ করতে হয়। কিন্তু তারা তেমন কিছু দিতে পারে না, এই সুবাদারদের তাদের প্রতি কোন অনুগ্রহ নেই। যার কারণে, তারা অন্যান্য আরমেনীয়, যারা তাদের সন্তুষ্ট করতে পারে তাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়। তারা তাদের সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করে যে তারা বাদশাহের কাছে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়; যা আমি অনেকবার ইস্পাহানে করতে দেখেছি।

    এই কনভেন্টগুলোর প্রধানতমটি থেকে দেড় লীগ দূরে একটি উঁচু পর্বত আছে, যা বাকিগুলো থেকে আলাদা, যা চিনির ডেলার মত উঠে গেছে, যেন পাইক অব টেনেরিফ। এই পর্বতের পাদদেশে কিছু ঝর্ণা রয়েছে, যেগুলোতে সাপের বিষ নিরাময় করার গুণ রয়েছে; এত বেশি যে, যদি সাপেদের সেখানে নিয়ে রাখা হয় তাৎক্ষণিক মারা যাবে।

    কাফেলা যখন নাকসিভান থেকে জুলফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত হয়, যেই সেখান থেকে একদিনের যাত্রার বেশি নয়, তখন প্রধান আরমেনীয়রা সাধারণত দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সন্তু স্টিফেনের কনভেন্টের পথে চলে যায়।

    এই সময়ে নাকসিভান থেকে সন্তু স্টিফেন পর্যন্ত রাস্তাটিতে একটি গ্রাম পড়ে, নাম ইক্লিসিয়া। সেখানে ধনী আরমেনীয়রা বসবাস করে যারা রেশমের দুর্দান্ত ব্যবসায় চালায়। তাদের খুব সুন্দর একটি চার্চ রয়েছে।

    ইক্লিসিয়া তেকে দুই লীগ পরে আরাস নদী পার হতে হবে খেয়া নৌকায়, কেননা, এই স্থানটি দুটি পর্বতের মধ্যবর্তীতে। একবার আমি বরফের উপর গিয়েছিলাম। প্রায় দুই মাসকেট শট পরে একটি সেতু পার হতে হয়, এটি আরাসে পড়া অন্য নদী। সেতুর পাদদেশ থেকে একটি ছোট পাহাড়ে উঠতে শুরু করুন, এর চুঁড়ায় আছে একটি বড় গ্রাম, নাম সাম্বে। যার বাসিন্দারা, পুরুষ এবং মহিলা, ১৮ বছর বয়সে পাগল হয়ে যায়; কিন্তু এই পাগলামি ক্ষতিকর নয়। কেউ কেউ এটাকে আসমানী সাজা বলে বিশ্বাস করে, কারণ এই পর্বতে তাদের পূর্বপুরুষেরা সন্তু বার্থোলোমিউ ও সন্তু ম্যাথিউকে নির্যাতন করেছিল।

    সেখান থেকে সন্তু স্টিফেনের দূরত্ব একলীগের বেশি নয়, তবে পথটি ঝামেলাপূর্ণ। সন্তু স্টিফেন একটি কনভেন্ট যা তৈরি হয়েছে ত্রিশ বছরও হয়নি। এটি পর্বতশিখরে অনুর্বর স্থানে অবস্থিত যাতে করাও অনেক কঠিন। কিন্তু আর্মেনীয়রা এই স্থানটিকে অন্য যেকোন স্থানের আগে পছন্দ করার কারণ হলো, সন্তু বার্থলোমিউ ও সন্তু ম্যাথিউ তাদের নিপীড়নের সময় এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা বলে, সন্তু ম্যাথিউ সেখানে এক অলৌকিক কাজ করেন। সেখানে আগে জল ছিল না, তিনি তার লাঠি যেখানে মাটিতে মেরেছিলেন সেখানে বর্তমানে একটি ঝর্ণা দেখা দিয়েছে। ঝর্ণাটি কনভেন্ট থেকে একলীগের এক অষ্টমাংশ দূরে একটি ভাল দরজাওয়ালা ভল্টের নীচে, যাতে জলের অপচয় রোধ করা যায়। আরমেনীয়রা এই ঝর্ণায় প্রবল ভক্তিসহ বেড়াতে যায়। নলের দ্বারা কনভেন্টে পানি সরবরাহ করা হয়। তারা আরও বলে, এই স্থানে তারা সন্তু বার্থলোমিউ ও সন্তু ম্যাথিউ রেখে যাওয়া কিছু পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পেয়েছে। যেগুলোতে তারা অনেক কিছু যুক্ত করেছে। যেমন একটি ক্রুশ, একটি গামলা যাতে খ্রিষ্ট তাঁর শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। ক্রুশের মধ্যখানে একটি সাদা পাথর, তারা বিবৃত করে, যদি সেটি কোন অসুস্থ মানুষের উপর রাখা হয়, যদি লোকটি মৃত্যুপথযাত্রী হয় তাহলে কালো হয়ে যাবে, এবং লোকটির মৃত্যুর পর পুনরায় সাদা হয়ে যাবে।

    শহীদ সন্তু স্টিফেনের চোয়ালের হাড়।

    সন্তু ম্যাথিউর খুলি।

    সন্তু জন ব্যাপটিষ্টের একটি ঘাড়ের হাড় ও একটি আঙুলের হাড়।

    সন্তু গ্রেগরির একটি হাত, যিনি ডায়োনিসিয়াস দ্য অ্যারিওপাজিটের শিষ্য ছিলেন।

    একটি ছোট সিন্দুক যাতে প্রচুর পরিমাণে হাড়ের টুকরো রাখা, যা তারা বাহাত্তর শিষ্যের অবশেষ বলে বিশ্বাস করে।

    আরমেনীয়দের সমস্ত চার্চের মত, চার্চটি ক্রস আকারে নির্মিত। এর মাঝখানে আছে একটি গুম্বজ, যার চারপাশে বারজন দূত দাঁড়িয়ে আছেন। চার্চ ও কনভেন্ট উভয়ই মুক্ত পাথরের, অট্টালিকাটি বেশি বড় নয়, কিন্তু দেওয়ালের উপর প্রচুর সোনা ও রূপার অপচয় করা হয়েছে। এতে অনেক আরমেনীয় পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কারণ মহিলারা এতটাই ধার্মিক ছিলেন যে, স্বামীকে না জানিয়ে তারা তাদের গহনা ও পোশাকাদি বিক্রি করেছিল নির্মাণ ব্যয় মিটানোর জন্য।

    প্রথমবার যখন আমি সন্তু স্টিফেনে গিয়েছিলাম, কিছু আরমেনীয় বন্ধু, দুজন বিশপ, আরও কয়েকজন উপস্থিত সন্ন্যাসী আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে আসেন। তারা আমাদের একটি বড় ঘরে নিয়ে গেলেন, যেখানে আমাদের অনেক ভাল সমাদর করা হয়েছিল। আরমেনীয়দের রীতি হল, খাবারের একটু আগে তারা অতিথীদের এক বড় পেয়ালা একুয়াভিটা[2], সব ধরনের মিষ্টান্ন, জামির ও কমলার খোসার ভিতরে মণ্ডা ভর্তি সাত আটটি চিনামাটির পাত্র একটি বড় চীনা রেকাবিতে সাজিয়ে পরিবেশন করে। এটা ক্ষুধাবৃদ্ধির একটা ক্ষুদ্র উপলক্ষ্য। আরমেনীয় পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য দেওয়া হয় বড় পেয়ালায় একুয়াভিটা, যা তারা দ্রুত শেষ করে ফেলে। রাতের খাবার শেষে তারা চার্চে যায়, সেখানে তারা নির্দিষ্ট স্তোত্র গায়—আপনি যখন ফিরে আসবেন, শোওয়ার জন্য থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক তোষক ও লেপ;—কারণ তারা সমগ্র এশিয়া জুড়ে অন্য কোন বিছানা ব্যবহার করে না—শুধু রাতে আপনি একটি গদির উপর কার্পেট বিছিয়ে নিবেন এবং দরোজা বন্ধ করে দিবেন। সারা সন্ধ্যায় আর্চবিশপকে দেখিনি, এখন চার্চে দেখলাম।

    মধ্যরাতে চার্চের সকল ঘণ্টা বেজে উঠল, সকলে চার্চে যাওয়ার জন্য জেগে উঠল। আমি মনে করি এটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি। কেননা এটা ছিল শ্রোভেটাইড[3]। প্রার্থনা ও গণসঙ্গীত পরিবেশন, উভয়ই দিনের শেষে শেষ করা উচিত। সকাল আটটা ও নয়টার মধ্যে দস্তরখান বিছানো হয়। এই সময়ের পূর্বে আমরা বহুসংখ্যক গ্রাম মানুষ দেখলাম যারা ওয়াইন, ফল ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে এসে আর্চবিশপের নিকট সমস্ত দাখিল করেছিল।

    আমরা যখন প্রাতঃরাশ করছিলাম, তখন খবর এল, একজন নির্দিষ্ট বিশপ মারা গেছেন। তিনি তিনটি চার্চ থেকে ফিরে আসছিলেন। সেখানে গ্রাম থেকে তাকে নির্দিষ্ট শুল্ক আদায় করার জন্য প্যাট্রিয়ার্ক প্রেরণ করেছিলেন। তৎক্ষণাৎ আর্চবিশপ তার সকল সহকারীদের নিয়ে খাবার ছেড়ে উঠে গেলেন। এবং মৃতের জন্য একটি প্রার্থনার আয়োজন করলেন। একজন বিশপ ও ছয়জন সন্ন্যাসীকে পাঠানো হলো মৃতদেহ আনার জন্য, যিনি মধ্যরাতের একটু পরে ফিরছিলেন। মৃতদেহটি বর্তমানে চার্চের আঙিনায় বিছানো একটি কার্পেটের উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বেদীর দিকে। এরই মধ্যে, প্রচুর সংখ্যক মক্ষিমলের মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল, এবং অবশিষ্ট রাত্রি দুজন সন্ন্যাসী পালাক্রমে মৃতের জন্য প্রার্থনার তদারক করছিলেন। প্রত্যুষে আর্চবিশপ, বিশপ ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গণ আধা ঘণ্টা যাবৎ মৃতের জন্য প্রার্থনা করলেন; গণসমাবেশ শেষে তারা শবকে বেদীর কাছে নিয়ে এলেন, যাতে বেদীতে মৃতের পদস্পর্শ করতে পারে। অতঃপর, তারা তার মাথা ঢেকে থাকা লিলেন কাপড় সরিলে নিলেন, সে সময়ে আর্চবিশপ তার ছয়টি স্থানে পবিত্র তেল উপলিপ্ত করলেন, প্রত্যেকবারেই নির্দিষ্ট প্রার্থনা করলেন। পুনরায় তাকে ঢেকে দেওয়া হল এবং আধাঘণ্টা যাবৎ প্রার্থনা করা হল। অনুষ্ঠানগুলো সমাপন হলে, তারা মৃতদেহকে ক্রুশ ও পতাকা সহ চার্চের বাইরে নিয়ে গেলেন। প্রত্যেকের হাতে ছিল একটি করে ক্ষুদ্র মোমশিখা। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে একজন বিশপ তার হাতে একটি কাগজ রেখে দিলেন যাতে লেখা ছিল, আমি পিতার নিকট থেকে এসেছি এবং পিতার নিকটই ফিরে যাচ্ছি। কনভেন্টের পাশেই একটি ছোট পর্বতে কবরখানায় আনার পরে তারা পনের মিনিট অন্যান্য প্রার্থনা করলেন। এরই মধ্যে একজন বিশপ কবরে নেমে গেলেন, সমস্ত পাথর সরিয়ে স্থানটিকে মসৃণ করে দিলেন, তারপর মৃতদেহকে বড় লিলেন চাদরে ঢেকে কবরে শুইয়ে দিলেন। তারপর বিশপ, তাদের রীতি অনুযায়ী তার মাথা শরীর থেকে উঁচু করে পূর্বদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। এসবের পর আর্চবিশপ ও তাঁর সহকারীরা প্রত্যেকে একমুষ্ঠি করে মাটি নিয়ে বিশপের হাতে দিলেন, তিনি সেগুলো শবের উপরে ছড়িয়ে দিলেন। এরপর বিশপ কবর থেকে বেরিয়ে এলেন। কবরকে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হল।

    সন্তু স্টিফেন থেকে আরাস পর্যন্ত একলীগ পরিমাণ উতরাই রয়েছে, পুনরায় জুলফার মহাসড়কে আসার জন্য এর পাশ ধরেই চলতে হবে। পর্বতের উপর দিয়ে আরেকটি রাস্তা রয়েছে যা একলীগের কাছের পথ। কিন্তু এটি খুব কষ্টের ও বিপদসঙ্কুল, তাই এই পথে যাতায়াত কম।

    কিন্তু নাকসিভান থেকে মহাসড়কে ফিরতে  হলে নাকসিভান থেকে আধা লীগ দূরে একটি নদী দেখা যায় যা আনাসে পড়েছে, এটি পার হতে হয় বারখিলানের একটি পাথরের সেতু দিয়ে। যদিও তুষার গলে না গেলে বা বৃষ্টিপাত না হলে এখানে সামান্য। সেতুর পরে রয়েছে তৃণভূমি। এই পথে ভ্রমণের সময় এখানে আমরা একবার থেকেছিলাম। এখানে ঈষদুষ্ণ জলের একটি প্রস্রবণ রয়েছে। এখান থেকে পান করলে পানকারীর পেট ছেড়ে দেয়। কাফেলা নাকসিভানে না থাকলে এই সেতুতে শুল্ক আদায়কারীরা এসে তাদের শুল্ক আদায় করে। প্রতিটি উটের বোঝার জন্য দশ আব্বাসী বা নয় লিভার দিতে হয়। এটা দিতে হয় মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য। বোঝাগুলো অনুসন্ধান না করেই পারস্যের অনেক জায়গায় এই শুল্ক দাবী করা হয়। সুবাদারকে তার সুবায় সংঘটিত প্রতিটি ডাকাতির জন্য জবাবদিহি করতে হয়, যা পারস্য ভ্রমণকে এতটাই নিরাপদ করে তোলে যে, আপনি ইচ্ছে করে না থাকলে, কাফেলার সাথে থাকার দরকার হবে না।

    সেতু থেকে জুলফা পর্যন্ত একদিনের যাত্রা। এই শহরটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার কারণে কাফেলাকে নদীর তীর থেকে পাঁচশত পদক্ষেপের মধ্যে অবস্থান করতে হয়।

    জুলফা, আরমেনীয়দের প্রাচীন বাসভূমি। শাহ আব্বাস এটিকে পারস্যের অধিভূক্ত করেছেন। এটি দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি শহর, যার মধ্য দিয়ে আরাস নদী বয়ে গেছে। দুতীরে সামান্য ভূমি রেখেই বয়ে গেছে। ভাটির দিকে কোন নৌকা চলে না (উজানে একটুকরো কাঠও বহন করা যায় না) এবং এখানে স্থানটি নিচু হয়ে সমভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রস্তরের আশঙ্কা নেই। এখানে স্রোতধারাও শান্ত।

    এখানে একটি সুন্দর পাথুরে সেতু ছিল, শাহ আব্বাস শহরটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার সময়ে এটিকেও ভেঙে ফেলেন যাতে এখানে তুর্কিদের কোন রকম আশ্রয়স্থল না থাকে। ধ্বংসাবশেষের কারণে বা পরিবেশের কারণে নগরটিকে একটি প্রাচীন সৌন্দর্যের শহর মনে হচ্ছে না; খালতা ছাড়াই পাথরগুলো গাঁথা হয়েছে যার কারণে বাড়িগুলো বাড়ির ছেয়ে গুহার মত ছিল বেশি। উত্তর-পশ্চিমাংশে লোকবসতি ছিল বেশি, অন্য দিকে লক্ষ্য করার মত কিছুই ছিল না। জুলফার জমিগুলো খুব উর্বর, সেখানে কিছু আর্মেনীয় পরিবার ফিরে এসেছে। তারা শান্তিতে বসবাস করছে। কোগিয়া নাজার, জুলফা থেকে বেরিয়ে আসা একজন প্রধান আরমেনীয়। ব্যবসায় করে ধনী হয়েছেন। শাহ আব্বাস ও তাঁর উত্তসূরী শাহ সেফির সাথে তাঁর অনেক সদ্ভাব। তিনি তাঁকে কেলোমার বা আরমেনীয় জাতির প্রধান বিচারক বানিয়েছেন। তিনি তাঁর দেশের সুনামের জন্য জুলফায় নদীর দুই তীরে দুটি বড় অতিথীশালা নির্মাণ করেছেন। তিনি লক্ষাধিক ক্রাউন ব্যয় করেছিলেন কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ফলে অসাধারণ কাজ দুটি অসমাপ্ত রয়ে গেল।

    জুলফার এদিকে অর্ধলীগ, আরাসে পতিত খরস্রোতা নদী পার হওয়ার আগে, তাউরিসে যাওয়ার জন্য দুটি উপায় বেছে নিতে পারেন। একটি ডান দিকে, দক্ষিণপূর্ব দিক দিয়ে, অন্যটি বাম দিকে, উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে। আমার শেষ ইস্পাহান ভ্রমণে এই পথে আট দশজনের একটি দল নিয়ে অশ্বারোহণে গিয়েছিলাম। কাফেলাকে মহাসড়কে ছেড়ে দিয়েছি, সেটি কখনো অন্য পথে যেতে পারে না শিলা ও প্রস্তরের কারণে। তাতে উটের খুরগুলো নষ্ট হয়ে যায়। যাই হোক, আমি একটি নতুন দেশ দেখতে ইচ্ছুক ছিলাম, যা আমি মহাসড়কে আসার আগে বর্ণনা করব।

    খরস্রোতা নদী, যেখান থেকে আমরা কাফেলা ছেড়েছিলাম, সেখান থেকে সামনে এগিয়ে গেলাম এবং একটি গ্রামে রাত্রিযাপন করলাম যা দেড় লীগের বেশি দূরে নয়।

    পরদিন, আরাসের তীর ধরে পাঁচ ছয় ঘণ্টা চলার পর আস্তাবাতে পৌঁছলাম। নদী থেকে তা এক লীগ দূরে। মানসিক ক্লান্তি দূর করার জন্য আমরা সেখানে দুই দিনের বেশি ছিলাম। এটি ছোটখাট শহর, কিন্তু খুবই পরিচ্ছন্ন; এখানে চারটি অতিথীশালা রয়েছে এবং প্রত্যেক ঘরেই রয়েছে ফোয়ারা। প্রচুর পরিমাণে জল শহরটিকে সমস্ত কিছুতেই খুব ফলপ্রসু করে তুলেছে; বিশেষ করে ভাল মদে। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যা রোনাস উৎপাদন করে, যার জন্য সমগ্র পারস্য ও ভারত জুড়ে রয়েছে এর আলোচনা। রোনাস হল একপ্রকার গাছের শেকড়, যা মাটিতে গুল্মের মত জন্মে এবং খুব বেশি বড়ও হয় না। লাল রঙ তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি এমন লাল যা মোগল শাসন থেকে বেরিয়ে আসা সমগ্র কালিকটকে সৌন্দর্যে রাঙা করেছে। মাটির নিচ থেকে টেনে বের করে আনা শিকড়গুলো অনেক লম্বা; সেগুলোকে তারা মানুষের হাতের চেয়ে লম্বা নয় এমন টুকরো করে কাটে, গাড়িতে বহন উপযোগী করার জন্য। আরমাসে রোনাস বোঝাই কাফেলাগুলোকে দেখা অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার, যেখান থেকে তারা ভারতে চালান করে।

    শিকড়গুলো রসপূর্ণ এবং উন্নত আরক উৎপাদন করে; কারণ আমার স্মরণে আছে, রোনাস বোঝাই একটি ভারতীয় জাহাজ থেকে অরমাসের রাস্তায় কিছু ফেলা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে রোনাসের আঁটিগুলো ভাসছিল, সাগর বেশ কয়েকদিন যাবৎ লাল রঙের দেখাচ্ছিল।

    আস্তাবাত থেকে বের হওয়ার পরে আমাদের জন্য উচিত কাজ হচ্ছে আমাদের ঘোড়াগুলোকে খড় ও বার্লি খেতে দেওয়া, বুঝতে পেরেছি সারাদিনের ভ্রমণের পর আমাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ করা বাঞ্ছনীয় নয়। সেখান থেকে নৌকায় চড়ে এক ঘণ্টার মত আমরা আরাস নদীর ভাটিতে ভ্রমণ করেছিলাম। দিনের অবশিষ্টাংশ আমরা পর্বতে ভ্রমণ করেছিলাম। স্রোতস্বিনী ও পাথরের উপর দিয়ে। সেই সন্ধ্যায় আমরা একটি ক্ষুদ্র জলধারার পাশে বিশ্রাম করেছিলাম।

    পরদিন, একটি প্রশস্ত উপত্যকায় দুই তিন ঘণ্টা ভ্রমণ করার পরে আমরা একটি উঁচু পর্বতে আরোহণ করলাম। একেবারে শীর্ষে দুই তিনটি জীর্ণ বাড়ি, সেখানে আমরা সেদিনের জন্য থেকে গেলাম।

    পরে, পঞ্চমবার কাফেলা ছাড়ার পরে, আমরা একটি উতরাই দিয়ে দুই তিন ঘণ্টা ভ্রমণ করে একটি বড় ও পরিচ্ছন্ন গ্রামে এসে পৌঁছলাম, এখানে অনেক ফলাদি উৎপন্ন হয়। সেখানে আমরা এক দুই ঘণ্টার জন্য বিশ্রাম নিলাম; সেখান থেকে আমরা একটি নদীর উপরে বিশাল পাথুরে সেতুতে এসে পৌঁছলাম। বৃষ্টি না হলে এই নদীতে জল থাকে না। এটি রৌমি হ্রদে পড়েছে। এর জল নোংরা ও বাজে স্বাদের, বিশেষ করে যখন পানি কম থাকে তখন পান করাই যায় না। সেতু থেকে পোয়া লীগ দূরে মাটিতে স্তম্ভের মত তিনটি লম্বা পাথর স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়েরা বলে, তারা স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে এগুলো স্থাপন করেছে। এই স্থানেই হিস্টাস্পেসের পুত্র দারিয়ূস নিজের ঘোড়ার দ্বারা ভদ্রলোকদের সাথে চতুরতা করে রাজা হয়েছিলেন। সেখান থেকে তাউরিস অর্ধলীগ। এই পথেই আমরা মেডিসের পর্বতমালা অতিক্রম করেছি যা প্রাচীন প্রার্থিয়ানদের দিকে চলে গেছে। এটি সমস্ত পারস্যের মধ্যে সবচেয়ে উর্বর। তারা প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা ও ফল উৎপন্ন করে। পর্বতমালার শিখরে সমতলে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়, যা অসাধারণ উর্বর। সেখানে উৎপন্ন প্রস্রবণ ও বৃষ্টিপাত সেখানে যা জন্মে তাতে সতেজ সৌন্দর্য ও উৎকৃষ্ট স্বাদের হয়। যা পারস্যের অন্য যেকোন স্থানের চেয়ে অনেক বেশি স্বাদের যেগুলোতে পানির প্রয়োজন পড়ে এবং এই ক্ষেত্রগুলির পণ্যগুলির দামও বেশি।

    এখন মহাসড়কে। এখন কাফেলা স্রোতটি অতিক্রম করে যেখানে আমরা এটিকে ছেড়ে এসেছিলাম। পরের রাতে আরাসের তীরে অবস্থান করে। পরের সকালে খেয়া পার হয়। এটি জুলফা হয়ে যায়নি, যদিও কাছাকাছি দিয়ে গিয়েছে। কেননা, শহরের অপর দিকে তিন লীগ পর্যন্ত রাস্তা অত্যন্ত খারাপ এবং সচরাচর ওই পথে যাতায়াত কম। এই কারণে জুলফাকে ডান হাতে ছেড়ে যেতে হবে, যা খুব বেশি পথ নয়। দুই ঘণ্টা ভ্রমণের পর আপনি একটি সেতু দিয়ে যাবেন যার নাম সুগিয়াক। এরপর আপনি হিথসে আসবেন যা উঁচু শিলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। সারাদিনের ভ্রমণে আপনি পানির সাক্ষাৎ পাবেন না, অবশ্যই একটি ছোট ঝর্ণা আছে যার পানি অত্যন্ত খারাপ, পশুগুলো এই পানি খুব কমই পান করে।

    পরদিন আপনি একটি সমতল এলাকা দিয়ে ভ্রমণ করবেন, এটি খুবই অনুর্বর। এখানে একটি বিচ্ছিন্ন অতিথীশালা ছাড়া কিছুই পাবেন না। যদিও এটি এমন একটি জায়গা যার খরচ দেওয়া হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মুক্ত পাথর দিয়ে তৈরি, যেগুলো দুর্দান্ত উপায়ে আনা হয়েছিল। পরবর্তী স্থান মারান্তে, নূহের স্ত্রীর সমাধিস্থলের জন্য বিখ্যাত। শহরটি খুব বড় নয়; বড় শহরে তুলনায় একটি ঝুপড়ির মত। কিন্তু পরিবেশ খুব মনোরম, একটি উর্বর সমভূমির মাঝখানে বেশ কিছু জনবসতিপূর্ণ গ্রাম দ্বারা সুশোভিত। এই সমভূমি মারান্তের চারপাশে একলীগের বেশি বিস্তৃত নয়, এর বাইরেও এলাকাটি সম্পূর্ণ অনুর্বর। যাই হোক, এটি সম্পূর্ণরূপে অলাভজনক নয়। ক্রমাগত উষর ভূমি হওয়ার পর এখানে উটগুলোর খাবার দেওয়া যায়, যেগুলো কাফেলার জন্য পালিত হয়। এই কারণে সুগিয়াক ও মারান্তেতে অনেকে উটের মালিক রয়েছে, যারা সড়কের একটি অংশ সজ্জিত করে রাখে। মারান্তেতে সড়কের নিরাপত্তার বিনিময়ে প্রতিটি উটের বোঝার জন্য তের আব্বাসী অথবা চার ক্রাউন প্রদান করতে হয়।

    মারান্তে ছেড়ে আসার পর, পরের রাতে থাকতে হবে সুফিয়ানা থেকে একলীগ দূরে জঙ্গলাকীর্ণ একটি সমভূমিতে। এখানে জলের কদর নেই। নানা রকম গ্রাম ভ্রমণ করার পর একটি অনুর্বর উপত্যাকাস্থিত অতিথীশালায় থাকতে হবে। কিন্তু এটি খুব সুলভ। সুফিয়ানা একটি গতানুগতিক বড় নগর যা প্রবেশ না করে দেখতে পারবেন না। কেননা, সড়কে ও এর চারপাশে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। এটিকে বরং নগরের চেয়ে বনাঞ্চলের মত বেশি দেখায়।

    পরদিন, যা সাধারণত এরিভান থেকে দশদিনের যাত্রা; কাফেলা অনুকূল, বৃহৎ ও উর্বর সমভূমি অতিক্রম করে টাউরিসে পৌঁছায়। এই সমভূমিগুলো মেডিয়ান পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত কয়েকটি নালা দ্বারা জলাবদ্ধ; কিন্তু সব জল একই রকমের উত্তম নয়, কেননা, কিছু আছে যা পান করার যোগ্য নয়।

    সুফিয়ানা ও তাউরিসের মাঝপথে একটি পাহাড় রয়েছে, এটি থেকে সেই সমভূমিগুলো সুদৃশ্য অবলোকন করা যায়। তাউরিস অবরোধের সময় সুলতান আমুরাথ (মুরাদ) এটির উপর সেনা শিবির স্থাপন করেছিলেন। এই খবর পারস্যের বাদশা শাহ সেফির নিকট পৌঁছাল যে, তিনি এটিকে পুড়িয়ে দিয়েছেন। উপরন্তু একলাখ সৈন্য নিয়ে এই দেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘তাকে কোন বাধা ছাড়াই আসতে দাও, আমি জানি কিভাবে বড় ঝামেলা ছাড়া তুর্কিদের আক্রমণের মূল্য পরিশোধ করতে হয়।’ তারা তখন ইস্পাহান থেকে পনের দিনের বেশি দূরে ছিল না। তখন শাহ সেফি সমস্ত স্রোতের গতিপথকে সামনে ও পিছন থেকে ঘুরিয়ে দিয়ে পারস্যের অভ্যন্তরে নদীহীন অঞ্চলে জলাশয় ও খালে প্রবাহিত করে দিলেন। কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি ঝর্ণা প্রবাহিত রইল। যার ফলে তুর্কিদের পুরো সেনাবাহিনী জলহীন সেই সুবিশাল অঞ্চলে জলের অভাবে মারা পড়ল যেখানে তারা অনেক দূরে নিযুক্ত করেছিল।

    তাউরিস ৮৩ ডিগ্রি ৩০ মিনিট দ্রাঘিমাংশ ও ৪০ ডিগ্রি ১৫ মিনিট অক্ষাংশে অবস্থিত। এটি একটি খোলা ময়দান যেখানে কোন গাছ দেখা যায় না। চতুর্দিক পর্বতমালা দ্বারা পরিবেষ্টিত, কেবল পশ্চিম দিকে খোলা। সবচেয়ে দূরবর্তী পর্বতটি নগর থেকে একলীগও দূরে নয়; একটি আছে একেবারে গা ঘেঁষে, নদীই কেবল তাকে পৃথক করে রেখেছে। এটি একটি উত্তম দেশ, প্রচুর ভুট্টা ফলে, ভাল চারণভূমি আছে এবং এটি ভোজ্য শস্যের বিশাল ভাণ্ডার। কেউ কেউ মনে করেন, তাউরিস হচ্ছে প্রাচীন একবাটেন, মেডিস সাম্রাজ্যের মহানগর। বর্তমানে এটি একটি বড় নগর ও জনবসতিপূর্ণ। তুর্কি, মুসকোভি, ভারতবর্ষ ও পারস্যের জন্য বড় বাজার হিসেবে পরিগণিত। এখানে অগণিত বণিক রয়েছে এবং সব ধরণের পণ্যসামগ্রী প্রচুর পরিমাণে রয়েছে—বিশেষ করে রেশম, যা গুইলাম প্রদেশ ও অন্যান্য জায়গা থেকে আনা হয়। এখানে রয়েছে ঘোড়ার বৃহৎ ব্যবসায়। এগুলো সুদর্শন ও সস্তা। মদ, একুয়া-ভিটা ও প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী বেশ সস্তা। এবং এশিয়ার অন্য সকল অঞ্চল থেকে এখানে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়। বহু আর্মেনীয় পরিবার এখানে ব্যবসায়ের মাধ্যমে প্রভূত সম্পদের মালিক হয়েছে এবং পারস্যবাসীদের চেয়ে ভাল বুঝে। তাউরিসের মাঝ দিয়ে একটি ক্ষুদ্র নদী প্রবাহিত হয়েছে যার জল অতি সুপেয়। এটির নাম শেইঙ্কাই। তার উপর দিয়ে শহরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে যাওয়ার জন্য রয়েছে তিনটি সেতু।

    তাউরিসের বেশির ভাগ বাড়ি তৈরি হয়েছে রোদে পোড়া ইট দিয়ে; বাড়িগুলো এক দুই তলার বেশি উঁচু নয়। ঘরের উপরে অংশ সোপানযুক্ত সমতল; ভিতরের ছাদগুলো খিলানযুক্ত এবং মাটি ও খড়ের মিশ্রণ দ্বারা পলেস্তারা করা যা পরে চুন দিয়ে সাদা করা হয়েছে। ১৬৩৮ সালে সুলতান মুরাদ কর্তৃক শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এটা প্রায় সম্পূর্ণ রূপে পুননির্মিত হয়েছে। এখানে আছে বাজার বা দোকানঘর, যেগুলো খুব উত্তমরূপে তৈরি করা হয়েছে। অনেক অতিথীশালা খুব সুবিধাজনক ও দ্বিতল বিশিষ্ট। সবচেয়ে সুন্দর হল প্রদেশের সুবাদার মির্জা-সাদে নির্মিত বাজার মহল। তিনি এর বিক্রয়লব্ধ আয় দ্বারা একটি মসজিদ ও মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেছেন।

    তাউরিসের বিশাল বাণিজ্য এটিকে সমগ্র এশিয়ায় বিখ্যাত করে তুলেছে : কারণ, এখানে তুর্কি, আরবীয়, জর্জীয়, মঙ্গলীয়, পারসীয়, ভারতীয়, মুসকোভাইট ও তাতারদের ক্রমাগত যাতায়াত রয়েছে। ছাদযুক্ত বাজার বা দোকান-মহল সর্বদা পণ্যে পূর্ণ থাকে। এখানে কেউ কেউ হস্তশিল্প পেশায় অপ্রতিদ্বন্ধী। কর্মকারদের তৈরি জিনিসগুলো মধ্যে রয়েছে করাত, কুড়াল, রেতি, আগুন-নাড়ানি ও কল্কিতে তামাক ঢোকানোর কাঠি। কেউ কেউ গৃহের তালা তৈরি করে। পূর্বাঞ্চলীয় লোকেরা তাদের দরজা কেবল কাঠের কীল দ্বারা বন্ধ করে রাখে। কিছু আছে কুন্দকার, যারা চাকার অক্ষ ও গাড়ির কাঠামো তৈরি করে। কিছু আছে স্বর্ণকার, যারা রূপার  ছোটখাট জিনিস তৈরি করে। কিন্তু এখানে প্রচুর রেশম-তাঁতি রয়েছে যারা শিল্পী এবং খুব সুন্দরভাবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে অন্য পেশার লোকের চেয়ে তারাই বেশি আছে। এখানে তাদের পরহিত পোশাকের বেশি অংশই শাগ্রিন[4] চামড়ার যা সমগ্র পারস্যে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। কারণ, তারা ব্যতীত অন্য কেউ এটা খরিদ করে না। কিন্তু শাগ্রিন চামড়ার বুট বা জুতা পরুন। এই চামড়া ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের চামড়া থেকে তৈরি করা হয়, তবে শুধুমাত্র চামড়ার পেছনের অংশ থেকে তৈরি করা হয়। কিন্তু গাধার চামড়ায় সবচেয়ে ভাল ফসম থাকে।

    তাউরিসে দেখা যাবে বড় খোলা চত্বরের পাশ ঘিরে জমকালো অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ ও ভগ্নাংশ গুলো। তারা সুউচ্চ ও বিশালাকারের চার পাঁচটি মসজিদকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। শহরের বাইরে, ইস্পাহান সড়কের মধ্যে এটিই সবচেয়ে জাঁকালো ও বিস্তীর্ণ স্থান। কিন্তু পারস্যবাসীরা এর নিকটেও আসে না, তারা এটিকে অপবিত্র ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের মসজিদ হিসেবে গণ্য করে। কেননা, এটি সুন্নি বা ওমরের অনুসারীদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি সুবিশাল কাঠামোর উপর সুনিপুণভাবে নির্মিত। এর সামনের অংশটি পঞ্চাশ কদম প্রশস্ত, আট ধাঁপের একটি সিঁড়িসহ। এটি বিভিন্ন রঙের ইটের কারুকার্য ছাড়াও অলঙ্কৃত; এবং অতি মনোরম প্রাচীন রীতির আল্পনা এবং সোনা ও নীলকান্তমণি দিয়ে আরবী সংখ্যা ও অক্ষরের কারুকার্যের প্রাচুর্যে বিভূষিত। সম্মুখের দুই পাশে দুটি মিনার বা চুড়াঁ। খুব উঁচু কিন্তু তেমন বেশি চওড়া নয়। তবুও উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে। এগুলো রঙকরা ইটের রেখা আঁকা, যা পারস্য স্থাপত্যের সাধারণ অলঙ্কার। মিনার শীর্ষে দুটি গুম্বজ, পারস্যবাসীদের পরিধান করা পাগড়ীর মত। মসজিদের প্রবেশদ্বার চার ফুটের বেশি চওড়া নয়, চব্বিশ ফুট উঁচু ও বার ফুট মোটা স্বচ্ছ সফেদ পাথর কেটে তৈরি। এই দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করার পর আপনি একটি প্রশস্ত গুম্বজের নিচে চলে আসবেন। এটির ব্যাস ছত্রিশ পদক্ষেপ, ভিতরে বারোটি স্তম্ভ ও বাইরে ষোলটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত। প্রতি স্তম্ভ খুব উঁচু এবং ছয় ফুট বর্গাকার। নিচে ভবনের চারপাশে ছোট ছোট খুঁটি বা গরাদযুক্ত অলিন্দ। দরজা দিয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়া যায়। প্রতিটি স্তম্ভের পাদদেশ সাদা মর্মরে তৈরি। মেঝের সমান ছোট ছোট কুলুঙ্গিতে ফাঁপা। লোকেরা ইবাদতের জন্য আরও ভিতরে প্রবেশ করলে এখানে জুতা রেখে যায়। দেওয়ালের ভিতরাংশ ফুল, সিফার ও আরবী অক্ষরের মিশ্রণে বিভিন্ন রঙে ও বর্গাকারে সাজানো। খোদাই কাজ, খুব সুন্দর আল্পনা, এত সুন্দরভাবে সোনায় মোড়ানো হয়েছে যে মনে হয় একটি একটি মাত্র কাজ, একটি নকশা থেকে কেটে লওয়া জোড়া।

    এই গুম্বজ থেকে অন্য একটি ছোট অথচ অধিক সৌন্দর্যপূর্ণ গুম্বজে যাবেন। নীচের অংশ স্বচ্ছ শ্বেতপাথরের, সমানের অংশও একই প্রকৃতির, দরজার মত করে কেটে শার্সি লাগানো। এগুলো কখনো খোলা হয় না। এই গুম্বজের কোন স্তম্ভ নেই, অথচ আটফুট উঁচু, শ্বেত মর্মরের তৈরি। এখানে দেখা যায় অতি বৃহৎ দৈর্ঘ ও প্রস্থের পাথর। খিলানের অভ্যন্তর বেগুণী কালাই করা। আনুভূমিকভাবে সব ধরণের ফুল দিয়ে আঁকা, তবে গুম্ভজের বহিরাংশ অলঙ্কৃত ইট আবৃত, ফুল খোটাইকৃত। প্রথমটিতে ফুলগুলো সবুজের উপর কালো; দ্বিতীয়টিতে কালোর উপর সাদা তারকা, রঙের বৈচিত্র নয়নাভিরাম।

    ছোটগুম্বজে প্রবেশের দরজার কাছে, বাম দিকে অদ্ভূতভাবে খোদাই করা আখরোট গাছের একটি আসন দেওয়ালের সাথে গেঁথে রাখা হয়েছে। এটি ছয় ধাপ উঁচু শামিয়ানা বিহীন একটি প্লাটফর্মে বসানো। ডান দিকে রয়েছে একই ধরণের কাঠে তৈরি সুক্ষ্ম কারিগরী দক্ষতায় তৈরি আরেকটি আসন। যা আগেরটির মতোই দেওয়ালে গেঁথে রাখা হয়েছে। এর চারপাশে রয়েছে ছোট গরাদিয়া; প্লাটফর্মটি চার ধাপ উঁচু। মসজিদের দক্ষিণ দিকে দুটি সাদা স্বচ্ছ পাথর রয়েছে যেগুলো সূর্যালোকে লাল দেখায়। কখনও কখনও সূর্যাস্তের পরেও সূর্যালোকের প্রতিফলনের কারণে সেই পাথরে বসে পড়তে পারবেন।

    মসজিদের ঠিক বিপরীত দিকে আরেকটি ভবনের সম্মুখাংশ, যা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের একমাত্র অবশেষ। এটি শায়খ ইমাম বা প্রধান পুরোহিতের বাসস্থান। একটি বড় স্নানাগার রয়েছে যা এই ভবনেরই অংশ। পরন্তু সেগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত, এগুলোর প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না, কোন রকম রক্ষণাবেক্ষণও করা হয় না।

    তাউরিসের বড় উদ্যান ও এর সংলগ্নে একটি মনোরম মসজিদ, একটি মহাবিদ্যালয় ও একটি ক্ষয়িষ্ণু দুর্গ রয়েছে। এই ভবনগুলো পরিত্যাগ করা হয়েছে, কেননা, এগুলো ওমরের অনুসারী সুন্নীদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। একই চার্চের নিকটে আরমেনীয়দের একটি চার্চ রয়েছে, যদিও তারা বলে, সন্তু হেলেনা আসল ক্রুশ পাঠিয়েছিলেন এখানে। এখানে আরেকটি মসজিদ রয়েছে, এটি পূর্বে ছিল সন্তু জন ব্যাপটিস্টকে উৎসর্গ করা চার্চ। তারা বলে, এখানে তাঁর একটি হাত বহুদিন যাবৎ সংরক্ষিত ছিল।

    তাউরিসে ক্যাপুচিনদের[5] একটি প্রশস্ত বাড়ি রয়েছে, তারা প্রদেশের সুবাদার মির্জা ইব্রাহীমের অনুগত, কেননা, তিনি তাদের সুরক্ষা প্রদান করেছেন। মির্জা ইব্রাহীম পারস্যের প্রধান সেনাপতি, তাউরিসের খানের সমমর্যাদা সম্পন্ন।

    সুবাদার রাজদরবারে নিজেকে অত্যন্ত গণ্যমান্য করে তুলেছেন, এবং তাঁর অদম্য কর্মকৌশল ও বাদশার রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ তৎপরতার জন্য বাদশাহের খুব আস্থাভাজন হয়েছেন। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি এমন সব উপায় বের করেছেন যা তাঁর পদাভিষিক্ত পূর্ববর্তী কারও চিন্তায় কখনো প্রবেশ করেনি। তিনি বুনিয়াদী বিজ্ঞান শিখতে খুব উৎসাহী, যা পারস্যবাসীদের মধ্যে একটি বিরল গুণ। তিনি গণিত ও দর্শনে খুব আনন্দ পান। প্রায়শই তিনি তাউরিসের ক্যাপুচিন কনভেন্টের প্রশাসক গ্যাব্রিয়েল ডি চিননের সাথে এইসব বিষয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু মির্জা ইব্রাহীমের প্রধান আকাঙ্ক্ষা তাঁর দুই পুত্রকে কথিত গ্যাব্রিয়েলের দ্বারা শিক্ষা প্রদান করা। এটাই কনভেন্টের পক্ষে তাঁকে এতটা অনুকূল করে তুলেছিল। তিনি ক্যাপুচিন ভিক্ষুদের বাড়ির তৈরি জন্য জমি কিনে দিয়েছিলেন এবং কাজের ব্যয়ভার বহনের জন্য অকুণ্ঠচিত্তে দান করেছিলেন।

    একদল লোককে নিযুক্ত করা হয়েছে, যারা সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময়ে ময়দানে বা শহরের বড় উদ্যানে ঢাক ও শিঙ্গা দ্বারা বিকট শব্দ সৃষ্টি করে। তারা উদ্যানের পাশে সামান্য উঁচু দরদালানে অবস্থান করে। এটা পারস্য সরকারের অধীনস্থ সকল শহরে পালন করা একটি রীতি।

    তাউরিস থেকে উত্তর দিকে গেলে, সন্নিকটেই একটি পর্বত রয়েছে, তার মাঝে কেবল একটি নদী রয়েছে। পর্বতের নাম ইনাজি-জেনালি। পূর্বে এই পর্বত শিখরে আরমেনীয়দের একটি মনোরম আশ্রম ছিল, যাকে মুসলমানেরা মসজিদে রূপান্তর করেছে। পর্বতের পাদদেশে একটি দুর্গ ও একটি মসজিদ আছে যা তারা ধ্বংস হতে দিয়েছে, কেননা সেগুলো নির্মাণ করেছিল উসমানীয়েরা। খাড়ি ও গিরিচুঁড়ার ধারে অনতিদূরে একটি মঠ রয়েছে, যার কাছে রয়েছে দুটি গুহা। সেখানে কয়েকটি সমাধি রয়েছে এবং ভূতলে পড়ে আছে মর্মরের স্তম্ভ। এছাড়াও মসজিদের পাশে রয়েছে প্রাচীন মেজিসের রাজাদের সমাধি, যার অবশিষ্টাংশ দেখে বোঝা যায় যে এটি অত্যন্ত চমৎকার ছিল।

    তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত রাস্তার উপর, সর্বশেষ বাগান থেকে আধা লীগ দূরে, ডান পাশে ছেড়ে আসা বিভিন্ন পর্বত  শিখরের মধ্যে সব থেকে উঁচুটিতে, যেখানে কখনও জল ছিল না এবং সেখানে কোন কিছু আনাও অসম্ভব, সেখানে পঞ্চাশ পদক্ষেপ দীর্ঘ একটি সেতু দেখা যাচ্ছে, যার খিলানগুলো অতি মনোহর, তবে সেগুলো ধ্বংসোন্মুখ। একজন মোল্লা এটি নির্মাণ করেছিলেন, কিন্তু কোন উদ্দেশ্যে তা কেউ জানে না। সেতুটি না দেখে ঐ পাশ দিয়ে আপনি তাউরিসে আসতে পারবেন না, কেননা, বিকল্প কোন পথ নেই। উভয় দিকে জল আর খাড়ি ছাড়া কিছু নেই। পরবর্তীকালে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, এটি নির্মাণ করেছিলেন অনর্থক অহমিকা থেকে নয়, শাহ আব্বাসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। যাতে তাউরিসে আগমণ করে প্রথমে তার নাম জানতে চায়। সত্যিই কিছু দিন পরে বাদশাহ এসেছিলেন এবং পর্বত শিখরে অনর্থক একটি সেতু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন কে এটি নির্মাণ করেছে এবং তার উদ্দেশ্য কী ছিল? মোল্লা বিনীতভাবে তার জবাব দিলেন, মহামান্য বাদশা, আমি এটি নির্মাণ করেছি, যাতে মহামান্য বাদশা যখন তাউরিসে আসেন, এটি যে নির্মাণ করেছে, আপনি তার সাথে কথা বলেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বাদশাহকে তার সাথে কথা বলতে বাধ্য করা ছাড়া মোল্লার আর কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না।

    তাউরিস থেকে এক লীগ পশ্চিমে, মাঠের মাঝখানে ইটের তৈরি একটি দুর্দান্ত টাওয়ার রয়েছে, যার নাম কানহাজুন। এটির ব্যাস প্রায় পঞ্চাশ পদক্ষেপ এবং যদিও অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে তবু অনেক উঁচু। ধারণা করা হয়, এটি কোন দুর্গের অন্ধকূপ ছিল। এর চার পাশে খুব উঁচু দেওয়াল। যদিও এগুলি মাটির তৈরি, তবুও এগুলোকে খুব প্রাচীন মনে হয়। কে এই টাওয়ার নির্মাণ করেছিলেন তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না, তবে দরজার আরবী অক্ষর থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কিছু কারণ পাওয়া যায় যে এটি একটি মুসলিম স্থাপনা। ১৬৫১ সালে তাউরিস ও এর আশেপাশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে অনেকগুলো বাড়ি উল্টে গিয়েছিল। এই টাওয়ারটির উপর থেকে নিচে পর্যন্ত ফাটল ধরে এবং উপরের অংশ নিচে পড়ে যায় এবং ভিতরের খালি অংশ ভরাট হয়ে যায়।

    তাউরিসের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদী ছাড়াও শহর থেকে প্রায় অর্ধ লীগ দূরে আরেকটি নদী আছে। এর উপর খুব সুন্দর একটি পাথরের সেতু আছে। এর নিকটে একটি সমাধিক্ষেত্র আছে, একটি গুম্বজ দ্বারা আবৃত। পারস্যবাসীরা বলে সেখানে ইমাম রিজার বোন শায়িত আছে। তারা এটিকে গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে চলা নদীটি উত্তরের পর্বতমালা থেকে উৎসারিত হয়ে তারিস থেকে তেরো চৌদ্দ লীগ দূরে রুমি হ্রদে পতিত হয়েছে। তারা এটিকে বলে আগ্গিসু বা তিক্তজল। এর জল খুব খারাপ এবং এতে কোন মাছ নেই। হ্রদের পরিধি পনের লীগ। তার গুণও একই, কৃষ্ণজল। নদী থেকে যে মাছগুলি এতে এসে পড়ে, অবিলম্বেই অন্ধ হয়ে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যায়। এই হ্রদের নাম হয়েছে প্রদেশ ও একটি ছোট শহরের নাম থেকে। যে দুটিকে রুমি বলা হয়। সেটি তাউরিস থেকে এগার লীগের বেশি দূরে নয়।

    হ্রদের মাঝখানে, টোকোরিয়াম নামক ছোট শহরে যাওয়ার পথে একটি ছোট পাহাড় রয়েছে, যা গতানুগতিকভাবে উপরে উঠে গেছে। এর আরোহণটি খুব মসৃণ এবং সেখান থেকে অনেকগুলো ঝিরি বেরিয়েছে। শিখর থেকে যত দূরে ছুটে যায়, ততই স্রোতের বিস্তৃতি হয়। যে মাটিতে তারা জল প্রবাহিত করে, তা দুটি স্বতন্ত্র গুণের। প্রথমটি খনন করে চুন তৈরি করা হয়। অন্যটির নরম ঝামার মত পাথর। তবে এর নীচে রয়েছে সাদা স্বচ্ছ পাথর, যা দেখতে কাচের মত যা গৃহকে মসৃণ ও চাকচিক্যময় করতে ব্যবহৃত হয়। এই পাথর মূলত স্রোতের জলের শিলীভবন। কখনও কখনও এর ভিতরে বিসর্পিল প্রাণীকে জমাট বাঁধতে দেখা যায়। প্রদেশের সুবাদার বাদশা আব্বাসকে অসাধারণ উপহার হিসেবে একটি টকুরো পাঠিয়েছিলেন, যার মধ্যে জমাট বেঁধে ছিল এক ফুট লম্বা একটি টিকটিকি। যে সুবাদারকে এটি দিয়েছিল তাকে বিশ টোমান বা তিন শ ক্রাউন দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আমি এই রকম একটির জন্য একহাজার দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। মাজাদান প্রদেশের কিছু অংশে যেখানে ইউক্সিন সাগর পারস্যের অভ্যন্তরে অনেকদূর বিস্তৃত হয়েছে, সেখানে এই জমাটবদ্ধ পাথকগুলি পাওয়া যায়। তবে রৌমি হ্রদের কাছে এত বেশি পাওয়া যায় না। অনেক সময় পাথরের মধ্যে কাঠের টুকরো বা কীট জমাটবদ্ধ দেখতে পাওয়া যায়। এইসব পাথরের একটি উটবোঝাই আমি নিয়ে এসেছি। সেগুলো মার্সেইলে রেখে দিয়েছি যতক্ষণ না সেগুলোকে কী কাজে ব্যবহার করবো তা খুঁজে না পেয়েছি।

    • [1] ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে সন্তু ডমিনিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রোমান ক্যাথিলিক ধর্ম প্রচারক ভিক্ষু, বা অনুরূপ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ভিক্ষুণী।
    • [2] লাতিন aqua-vitae, অর্থ জীবনজল হচ্ছে ইথানলের ঘনীভূত জলীয় দ্রবণের প্রাচীন নাম। অনেকটা প্রাচীন ভারতীয় সোমরস তুল্য।
    • [3] শ্রোভ মঙ্গবার ও তার আগের দুইদিন, সেকালে গতানুগতিকভাবে পাপস্বীকার করার প্রথা ছিল।
    • [4] Shagrin or shagreen— ট্যানবিহীন চামড়া।
    • [5] ক্যাপুচিন, পুরো নাম ‘অর্ডার অফ ফ্রাইয়ার্স মাইনর ক্যাপুচিন’, একটি খ্রিষ্টান ভিক্ষু সম্প্রদায় তারা সন্তু ফ্রান্সিস অব অ্যাসিসির উগ্র অনুসারী। ১৫২৯ সাল থেকে তারা মিশনারি ও প্রচার কাজে নিযুক্ত।
    তাহের আলমাহদী
    তাহের আলমাহদী
    জন্ম কুমিল্লায়। পড়াশোনা করেছেন লাকসাম নওয়াব ফয়েজুন্নেসা সরকারি কলেজ ও নোয়াখালী সরকারি কলেজে। রিযিকের সন্ধানে দেড় যুগের বেশি সময় আছেন সাউদী আরবে। সাহিত্যের চর্চা ছাত্রজীবন থেকে হলেও কোন লেখাই প্রকাশিত হয়নি। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের বশেই গড়ে তুলেছে সাহিত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এডুলিচার। এছাড়া বিনামূল্য গ্রন্থ সরবরাহের জন্য আছে এডুলিচার অনলাইন লাইব্রেরি এবং সম্পাদনা করছেন অনলাইন সাহিত্য পত্র ‘জেগে আছি’।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here
    Captcha verification failed!
    CAPTCHA user score failed. Please contact us!

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব সাত

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : জাঙ্গান, সুলতানিয়া ও অন্যান্য স্থান হয়ে তাউরিস থেকে ইস্পাহানে যাওয়ার সাধারণ রাস্তা। আমাদের এখন তাউরিস ছেড়ে ছয় লীগ দূরে হ্রদে ফিরতে হবে,...

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব ছয়

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ : আরডেভিল ও ক্যাসবিনের মধ্য দিয়ে তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপলিটান সড়কের ধারাবাহিকতা। তাউরিস থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত কাফেলা সাধারণত চব্বিশ দিনের যাত্রা করে। প্রথম...

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব চার

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ কনস্টান্টিনোপল থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত সড়কের ধারাবাহিকতা, পারস্য সীমান্ত থেকে এরিভান পর্যন্ত। এরিভান থেকে তিন লীগ দূরে এটি প্রথম স্থান, খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে...

    তাভেরনিয়ের ভ্রমণ : পর্ব তিন

    কাফেলাগুলো একই ধারায় যাত্রা করে না। কর্মযজ্ঞে কখনও তারা দ্রুত আসে, কখনও দেরীতে আসে। এটা নির্ভর করে জল ও সরাইখানা অথবা তাঁবু স্থাপনের উপযুক্ত...

    তাভেরনিয়ের ভ্রমণ : পর্ব দুই

    কনস্টান্টিনোপল থেকে ইস্পাহান, এই পথেই লেখকের প্রথম পারস্য ভ্রমণ। এটা কদাচিৎ যে কোন কাফেলা কনস্টান্টিনোপল থেকে পারস্যে যায়; কিন্তু বুরসা থেকে তারা প্রতি দুই মাসেই...

    তাভেরনিয়ের ভ্রমণ : পর্ব এক

    একজন মানুষ একই সময়ে ও একই উপায়ে এশিয়া ভ্রমণ করতে পারে না, যেমনটি তারা ইউরোপ ভ্রমণ করে। শহর থেকে শহরে সাপ্তাহিক কোন গাড়ি নেই,...

    লেখক অমনিবাস

    দুনিয়া-সার

    পথের ধারে বিশাল মাকাবুরা, সারি সারি কবর; চেনা-অচেনা কত মানুষ, কেউ তো রাখে না খবর বছরের পর বছর যায়, একাকী— ভাবে না মানুষ, আমার কতদিন বাকী! যারা মনে...

    বানান ও উচ্চারণ, কে কার অনুগামী হবে?

    উচ্চারণ অভিধানগুলোতে ব্যঞ্জনবর্ণের লুপ্ত অ-কে ও দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, বানান থেকে হসন্ত বিলুপ্ত করার প্রয়াসেই এই নূতন সমস্যার সৃষ্টি। সকলেই জানে ব্যঞ্জন বর্ণের মধ্যে...

    পরিবর্তন

    হৃদয় ছিল আমাজানের মত, সহস্রাধিক জাতের বৃক্ষ, লতা, গুল্মে ভরা, পশু, পাখি আর শ্বাপদের অভয়াচরণ। কামনার আগুনে জ্বলে গেছে সব, পড়ে আছে ছাই, কয়লা আর হাড়; হৃদয় এখন বিশাল...

    তাভিরনেয়ের ভ্রমণ : পর্ব চার

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ কনস্টান্টিনোপল থেকে ইস্পাহান পর্যন্ত সড়কের ধারাবাহিকতা, পারস্য সীমান্ত থেকে এরিভান পর্যন্ত। এরিভান থেকে তিন লীগ দূরে এটি প্রথম স্থান, খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে...

    রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    গুরুদেবের পাশের ওই ব্যক্তিটির একক ছবি দিয়েও আজকের এই পোষ্ট দেওয়া যেত। হয়তো সেটা সঙ্গতও হত। কিন্তু ওই ব্যক্তিটি নিজের জীবনে নিজেকে কখনই 'রবীন্দ্রনাথ'...

    সময়ের সুখ অসুখ

    সুখের এবং অসুখের দুদিন মাত্র সময় জীবনও তাই, আলোকোজ্জ্বল, মেঘময়। সময় যা করে তার তরে নিন্দা যে করে, তারে বল, সময় কি ছাড়ে মহাপুরুষেরে? তুমি কি দেখ নি,...

    এই বিভাগে