সপ্তাহের সেরা

    আখ্যাত রচনা

    মান-অভিমান

    মুদিত নয়নে দেখে সেদিন নদীর ধারে

    মনে ক্ষীণ দ্বিধা রেখে অবশেষে শুধি তারে—

    “যে চোখে স্বপন খুঁজে পায় পথিকের মন,

    আছ কেন তাহা বুজে, করেছ কি কোনো পণ?”

    “চৈতের প্রহরবাদে মুদে রাখিলাম আঁখি;

    ঠাকুরের অপবাদে নাহয় থাকুক বাকি।

    আমার বোজানো আঁখ না-আনুক সর্বনাশ;

    এই চোখে খুঁজে পাক কোনোজন তার আশ।”

    বুঝিলাম— রবিবাণী হতাশ করেছে তারে,

    তাই তো সে অভিমানী; কে মান ভাঙাতে পারে!

    করে দেখিব কি তবে ভাঙিতে তাহার মান?

    যা হবার তাই হবে; কে-বা জানে আনজান!—

    “রমণীর আঁখিতুলি নাহি কভু সর্বনাশে;

    নর নিজ গুণ ভুলি পতনের বানে ভাসে।

    কালো-নীল মণি জোড়া জীবন কভু-না পোড়ায়;

    তাহা অনুরাগে মোড়া; উদাস হৃদয় জুড়ায়।”

    “নিজের জুড়াতে হৃৎ রচো নারীগুণগান

    আর কতশত গীত; দাও তারে যশ-মান।

    মিটিয়া যাইলে পরে পুষে-রাখা সব সাধ,

    দারুণ বাহনা করে সরাইয়া লও কাঁধ।

    অথচ বলিবে সদা, ‘রবো সাথে সুখে-দুখে।’

    নয় কি তা ফাঁকা কথা বলে চলো মিছে মুখে?

    না-গেছ ভুলিয়া তুমি রবিঠাকুরের বাণী;

    আদরে ললাট চুমি শেষে দোষ দেবে জানি।”

    ধিরযেরে খুন করে মুখেতে ফুটিয়ে বুলি

    কথাসব দৃঢ় স্বরে কয়ে দিলো আঁখি খুলি।

    তারে কী-বা দেব দোষ; কথা নয় পুরো মিছে—

    করিতে মেজাজ খোশ নর ছোটে নারীপিছে।

    তাবৎ ক্ষমতা-জ্ঞান পায়ে ঠেলে প্রেমেহেরে

    ট্রয়ের প্যারিস জ্যান্ চুনেছিল হেলেনেরে।

    তবুও চাপিল দায় রমণী হেলেন ’পরে—

    ‘নারী রূপ-লালসায় নগরী বিনাশ করে।’

    যদিও চরণদ্বয়ে নাশেতেই ছিল আশ;

    প্রেমে প্রতারিত হয়ে সব লাগে ছাইপাঁশ।

    সাহস করিয়া শেষে হাতে ফুল দিয়ে গুঁজে

    পাশে বসে বঁধুবেশে আমিও নয়ন বুজে

    তার কাঁধে রেখে মাথা কলাম ভাঙিতে ভুল—

    “নারীর আসল গাথা রচেছে তো নজরুল।

    যে পুরুষ দেশে দেশে খুঁজিয়াছে নিজ রাহা,

    অবশেষে নারীতে সে পেয়ে গেছে পুরো জাহাঁ।

    আপন আঁচলতলে দিয়ো তারে থোড়া মায়া।

    ডাল ভেঙে দেয় বলে তরু কি না-দেয় ছায়া?”

    এবি ছিদ্দিক
    এবি ছিদ্দিক
    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমএ) পর্বে অধ্যয়নরত। বাংলা ভাষার বিবিধ বিষয় নিয়ে চর্চায় অনুরাগী। জন্ম কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায়।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here
    Captcha verification failed!
    CAPTCHA user score failed. Please contact us!

    মোহমত্ত জীবন

    মোহমত্ত জীবন আহা মোহের কী যে দশা! তুমি মত্ত হইলে তাহে হইবে জীবন সর্বনাশা। যেমন পতঙ্গ মরিছে জ্বলন্ত প্রদীপে পুড়িয়া, তাহার সৌন্দর্য দেখিয়া। হরিণ মরিছে কানে শুনিয়া ব্যাধের বংশীধ্বনিতে মজিয়া। কালো...

    হেরে যাইনি আমি

    হেরে তো যাইনি আমি হারিয়েও যাইনি পথে, অস্তিত্বে রয়ে গেছি স্বকীয়। পদচ্ছাপ ঠিক রয়েছে ঘরময় বিলীন হয়নি আজও। অনুভবের অনুবাদ তোলপাড় তব স্মৃতিতে ভ্রমণ অগণন সময়ের আলোড়ন...

    পরিবর্তন

    হৃদয় ছিল আমাজানের মত, সহস্রাধিক জাতের বৃক্ষ, লতা, গুল্মে ভরা, পশু, পাখি আর শ্বাপদের অভয়াচরণ।কামনার আগুনে জ্বলে গেছে সব, পড়ে আছে ছাই, কয়লা আর হাড়; হৃদয় এখন বিশাল...

    বিবরণ

    অদূরে পাহাড়; রঙের বাহার খেলিছে তাহার ’পর; নীলাভ সবুজ; মলিন সুরুজ; কুয়াশা বাঁধিছে ঘর। পাহাড়ের সারি গুনিতে না-পারি; গিয়েছে মিলিয়ে নভে; পাহাড়ের ছায়ে পাহাড় দাঁড়ায়ে; সবারই নজর...

    বহতা কষ্টনদী

    ২০২২সাল... এনেছিল কষ্টের বেনোজল ভাসায়ে নিয়েছে মোর মা'কে তারপর দিন-মাস করে করে, সময় ফুরালো পলে পলে। বেনামা শূণ্যতা বয়ে বয়ে... যা আজও অবিকল আছে ।অনুভূতিরা রয়ে...

    তুমি ব্যঞ্জন

    একটা 'তুমি'র বিস্তৃতি যেনো আদিগন্ত ব্যাপী 'তুমি' শব্দটা তাই শত নামে স্বরূপি।কবির কলমও তুমিময়। গল্পে ও কাব্যগাথায় তেমনই প্রকাশ পায়। তবু বুঝতে পারি না একটা 'তুমি' সম্বোধন... ভরা কতোশত ব্যঞ্জন?আর...

    দুনিয়া-সার

    পথের ধারে বিশাল মাকাবুরা, সারি সারি কবর; চেনা-অচেনা কত মানুষ, কেউ তো রাখে না খবর বছরের পর বছর যায়, একাকী— ভাবে না মানুষ, আমার কতদিন বাকী! যারা মনে...

    কল্পিত সুখের মহড়া

    মানুষের কল্পিত সুখটাই বোধকরি বেশি সুন্দর তেল-নুন ছাড়াই ঘরকন্না এখানে... অনায়াসে রাত-দিন স্বপ্নসৌধ গড়ে, নির্বিঘ্নে, ইট-কাঠ-পাথরে সেজে সংসারী। ঘর-বারান্দায় নরম আলোকিত সুখের মহড়া মোমে-মখমলে-সন্ধ্যাদীপে জড়িয়ে...

    পরিবর্তন

    সরলতাকে ধিক্কার দিও না প্রকৃতির নির্মলতা, জলের স্বচ্ছতা সেখানে। কোনো চাতুরি ছিল না। খুব করে চাইলে, বলতেই পারতে ছুটে কি আসতে পারতাম না? নিঃস্ব ...

    সময়ের সুখ অসুখ

    সুখের এবং অসুখের দুদিন মাত্র সময় জীবনও তাই, আলোকোজ্জ্বল, মেঘময়। সময় যা করে তার তরে নিন্দা যে করে, তারে বল, সময় কি ছাড়ে মহাপুরুষেরে? তুমি কি দেখ নি,...

    মনোরম সাঁঝ

    জলে যে জীবন আছে তারাও কি জ্বলে প্রেমে পড়ে তাদেরও কি আছে নাকি সামাজিক বাধা, এক হতে তারাও কি ঘর ছাড়ে, বাধা আসে নানা ধর্ম...

    কিছু কথা থাকে

    জীবনে কিছু কথা থাকে লুকিয়ে রাখার জন্য কিছু কথা থাকে চিরকাল বয়ে বেড়ানোর জন্য কিছু কথা থাকে শুধু দুজনের চোখাচোখি হবার জন্য তেমনি কিছু...

    লেখক অমনিবাস

    ছিল প্রয়োজন

    না-জানি যতনে বোনা কত যে লালিতকথামালা তব পায়ে হয়েছে দলিত।তুমি মোর শেষ চিঠি যখন পুড়েছ;বই খুলে ফুল দুটি বাহির করেছ,তখন পড়েছে জানি তার কথা...

    বিবরণ

    অদূরে পাহাড়; রঙের বাহার খেলিছে তাহার ’পর; নীলাভ সবুজ; মলিন সুরুজ; কুয়াশা বাঁধিছে ঘর। পাহাড়ের সারি গুনিতে না-পারি; গিয়েছে মিলিয়ে নভে; পাহাড়ের ছায়ে পাহাড় দাঁড়ায়ে; সবারই নজর...

    এই বিভাগে